Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগান নারী বিচারকেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

একটি দেশ তখনেই তার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় যখন সে দেশের কাজের অংশীদারিতে নারী পুরুষ উভয়ের ভূমিকা থাকে। একি সূতায় গাথা হলে একটি সমাজ গঠন করতে ততোটাও বন্ধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয় না।আফগানিস্তানে সম্প্রতি ভিন্ন চিত্র দেখা দিয়েছে।

বিগত দুই দশকে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন আফগান নারী বিচারকেরা। সফলতার সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তবে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের পুনরুত্থানে বদলে গেছে পরিস্থিতি। এতদিন যে আসামিদের সাজা দিয়েছিলেন এসব নারী বিচারক, তাঁরা এখন কারাগার থেকে বেরিয়ে বিচারকদেরই হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন। এর ফলে তালেবানের আমলে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে দেশটির নারী বিচারকদের অনেককেই।

আফগানিস্তানের বিভিন্ন গোপন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া অন্তত ছয়জন নারী বিচারকের জীবন এখন বেচে থাকার জন্য। তালেবানের আমলে আফগান নারী বিচারকদের প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়ানোর চিত্র উঠে এসেছে।

বিলাল কারিমি, তালেবানের মুখপাত্র জানান, 'অন্যান্য পরিবারের মতো নারী বিচারকদের নির্ভয়ে বাস করা উচিত। কেউ তাঁদের অবশ্যই হুমকি দেবেন না। আমাদের বিশেষ সামরিক ইউনিট এ ধরনের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে, লঙ্ঘন হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।'

নিরাপত্তার জন্য আফগান নারী বিচারকদের অনেকেই নিজেদের নাম বদলে ফেলেছেন, যাতে সহজে তাঁদের সন্ধান পাওয়া না যায়।  বিচারক মাসুমা (ছদ্মনাম), পেশা জীবনে তিনি সফলতার সঙ্গে ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের শতাধিক মামলায় আসামিদের সাজা দিয়েছেন।

আফগানিস্তানের একটি শহরে এতদিন নিরাপদে বসবাস করছিলেন মাসুমা। তবে তাঁর শহরে তালেবান যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর সেখানকার কারাগার থেকে হাজারও সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পরই বদলে যায় মাসুমার জীবন। তাঁর আদেশে যেসব আসামি কারাগারে গিয়েছিলেন, বেরিয়ে এসে তাঁরা মাসুমাকে হত্যার হুমকি দিতে শুরু করেন। অপরিচিত নম্বর থেকে হুমকিসহ ক্ষুদে বার্তায় ভরে ওঠে তাঁর মুঠোফোন।

মাসুমা বলেন, ‘মধ্যরাতে আমরা জানতে পারি তালেবান স্থানীয় কারাগার থেকে সব কয়েদিকে মুক্ত করে দিয়েছে। এ ঘটনায় দ্রুত আমরা পালিয়ে আসি। বাড়ি–ঘর, সবকিছু ফেলে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’ যেন কেউ চিনতে না পারে সে জন্য বোরখা পরে সব চেকপয়েন্ট পার হয়েছেন। তিনি বাড়ি থেকে পালানোর পর প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পারেন, তালেবান সদস্যরা তাঁর খোঁজে বাড়িতে এসেছিলেন।

গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে ২৭০ জন নারী বিচারক পদে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই দেশটিতে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২২০ জনের বেশি নারী বিচারক নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অজ্ঞাত জায়গায় লুকিয়ে রয়েছেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ফোনে প্রতিবেশীদের কাছে বর্ণনা শুনে মাসুমা ওই ব্যক্তিকে চিনতে পেরেছেন। তিনি জানান, তাঁকে খুঁজতে আসা ওই ব্যক্তি তালেবান সদস্য। তালেবানের ক্ষমতা দখলের কয়েক মাস আগে তাঁর আদালতে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা চলেছিল। সে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছিল। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন মাসুমা। তবে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর মুক্তি পান সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি।

মামলার রায় ঘোষণার পরও ওই ব্যক্তি মাসুমাকে হুমকি দিয়েছিল। পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের শাসনামলে আফগানিস্তানের বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছিল।গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে ২৭০ জন নারী বিচারক পদে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই দেশটিতে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২২০ জনের বেশি নারী বিচারক নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অজ্ঞাত জায়গায় লুকিয়ে রয়েছেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই ফোন নম্বর বদলে ফেলেছেন। নিরাপত্তার জন্য কয়েকদিন পর পর তাঁদের লুকিয়ে থাকার জায়গা বদলাতে হচ্ছে।

মাসুমাসহ  আফগান নারী বিচারকদের অবস্থা খুবই কঠিন। তালেবানের আমলে তাঁদের সবাই হত্যার হুমকি পেয়েছেন। দেশটিতে তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগে স্ত্রী হত্যার দায়ে যাদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন, এখন তাঁরা কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন এসব নারী বিচারকদের।

বিলাল কারিমি বলেন, ‘আফগানিস্তান জুড়ে বিদায়ী সরকারের সঙ্গে কাজ করা সকল সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে তালেবান। এর পরও কেউ যদি দেশ ছাড়তে চান, তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, এটা করার প্রয়োজন নেই। তাঁরা আফগানিস্তানে থাকতে পারবেন।’

আফগানিস্তান সরকার কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন সাময়িক ভাবে সেটা বুঝে ওঠা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।তবে দেশটির নারীদের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে আশার আলো দেখার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ