Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিবাহ

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কয়েক দফা বাড়িয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। আর এর অন্যতম কারণ হলো বাল্যবিবাহ। 

 

গ্রামের দিকে বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি দেখা গেছে। তবে শহরেও এই হার একেবারে কম নয়। দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে অবস্থিত বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মেয়েদের একটি অন্যতম আঞ্চলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর খুব খারাপ প্রভাব রেখেছে। বাল্যবিবাহের বড় রকমের শিকার হয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪৫ জন। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ মাসের বন্ধের মধ্যে ৮৫ জন শিক্ষার্থীরই বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির দুইজন, সপ্তম শ্রেণির ১১ জন, অষ্টম শ্রেণির ১৭ জন, নবম শ্রেণির ২৮ জন, দশম শ্রেণির ১৪ জন ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জন।

 

গত ১২ সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয় খোলার পর বাল্যবিবাহের এই সংখ্যা সহপাঠী ও শিক্ষকদের নজরে এসেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার আশংকাজনক হারে কমে গিয়েছে। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিলো ৭০-৯০ শতাংশ। বর্তমানে উপস্থিতি ৪০-৫০ শতাংশ। এতে শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্য পেয়েছেন। ওই উপজেলার ৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

 

দরিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ উপজেলায় বাল্যবিবাহের হার বেড়েই চলেছে। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, মানুষের সাইকেল মেরামত করে যা পাই তাই দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে। দেশে করোনা আসার পর আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল। দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তাই একটা ভালো সম্বন্ধ পাওয়ায় আর দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি।’

 

কেবল ফুলবাড়ি উপজেলাতেই নয় সারা বাংলাদেশেই এই অবস্থা। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, নব্য দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে এ বাস্তবতা স্বতন্ত্র-রূপে হাজির হয়েছে। যেমন দরিদ্র, নব্য দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক শিক্ষার্থীকেই করোনার সময়ে বিভিন্নভাবে পরিবারকে সহযোগিতা করতে হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকেই বেছে নিতে হয়েছে আয়-রোজগারের পথ। অন্যদিকে অধিকাংশ পরিবারেই ছিল তীব্র খাদ্য সংকট। আবার দারিদ্রের কারণে অনেক পরিবারের অভিভাবকরাই ভাবেন যে হয়তো বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই ভালো হবে। আরেকজন সদস্যের পেট চালানো কম কঠিন নয়। 

এছাড়াও শিক্ষার দীর্ঘ বিরতির কারণে অনেক মেয়েদেরকেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। এসব শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফেরানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ