Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় নারী নির্যাতন বেড়েছে বহুমাত্রিক

দীর্ঘ ১৭ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পড়ে আছে বাংলাদেশ। এর ফলে দেখা দিচ্ছে মানসিক অবসাদ, পারিবারিক অশান্তি, নির্যাতন। সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নারী ও শিশুরা।

 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যাসহ নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের মতো বিভিন্ন অপরাধের ১ হাজার ৪৫১ টি ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত একই ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৭৯৪ টি।অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ।

 

সমাজের বিশিষ্ট-জনেরা এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা যেমন বেড়েছে তেমনি তা আকারও ধারণ করেছে বহুমাত্রিক। তারা বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

 

নির্যাতনে শিকার নারীর পাশে সমাজ-রাষ্ট্র তো নয়ই, পরিবারও দাঁড়ায় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অভিযুক্ত প্রভাবশালী হলে তার বিরুদ্ধে আইনও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এই সংস্কৃতি বাড়িয়ে দিচ্ছে অপরাধ-প্রবণতা। অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত হওয়ায় মনোযোগ হারাচ্ছে নারী নির্যাতনের বিষয়ে।

 

এই বাস্তবতার মধ্যেই আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৯৫ সালের আজকের দিনে দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিনকে পৈশাচিক-ভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে হত্যা করে একদল পুলিশ। যার প্রতিরোধ গড়ে উঠে দিনাজপুরসহ সারা দেশে। এরপর থেকেই দিনটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, কোভিডের সময় পারিবারিক সহিংসতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারী নির্যাতন খুব বেড়েছে। পাশাপাশি শিশুদের উপর নির্যাতনও বেড়েছে। বর্তমানে নারীর উপর পারিবারিক সহিংসতা পেয়েছে একটা ভিন্ন মাত্রা। যৌন সহিংসতা, পারিবারিক কলহ, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা, তালাক, যৌতুকের জন্য অত্যাচার, বিকৃত যৌনতাও ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েছে কোভিডের সময়। অফিস, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার ফলে অবসর সময়ে পুরুষ ও শিশুরা ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

 

তিনি নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, বর্তমানে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটলেও আঙুল তার দিকেই উঠে। তার ব্যক্তিগত জীবন ও পোশাক নিয়ে উঠে মুখরোচক আলোচনা এবং শেষে তাকেই দায়ী করা হয়। নির্যাতনে শিকার নারীর পাশে সমাজ-রাষ্ট্র তো নয়ই পরিবারও দাঁড়ায় না। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা হলে তেমন প্রতিরোধ, প্রতিক্রিয়াও গড়ে উঠে না। অপরাধের শাস্তির জন্য প্রয়োগ হচ্ছে না আইন। এছাড়া প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে আইন কার্যকর হচ্ছে না। এই সংস্কৃতিই বাড়িয়ে দিচ্ছে অপরাধ-প্রবণতা।

 

এসময় এমন অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন যারা আগে কখনও নির্যানের শিকার হয় নি- এই তথ্য মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রকাশ করেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশ করা জরিপে দেশের ২৭ টি জেলায় করা জরিপ দেখা যায়, এসময় ৪ হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং ৩৩ টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ জন শিশু আগে কখনও নির্যাতনের শিকার হয় নি।

 

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৮৪৮ জন নারী স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৮ জন, যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৫ জন নারী এবং ১ হাজার ৩০৮ জন নারী  হয়েছেন অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার।

 

এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ নারী, ১ জন কে হত্যা করা হয়েছে এবং ২০ নারীকে করা হয়েছে যৌন হয়রানি। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক অর্পিতা দাস বলেন, লকডাউনে ঘরে থাকা চাকরি হারানো মানুষ চড়াও হচ্ছে নারীর উপর।

 

গ্রামেই নির্যাতনের হার বেশি। স্কুল বন্ধ থাকায় এবং কাজ না থাকায় এ সময় শিশু নির্যাতনের হার বেশি। কোভিডের সময় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের মূল দায়িত্বটা ছিল সরকারের।

 

পরিবারের সদস্যদের উচিত শিশুদের সাথে সময় কাটানো এবং তাদের মানসিক অবসাদ দূর করা। এছাড়া দুঃসময়ে নারী ও শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ