Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঁধের কারণে কমছে পৃথিবীর গতি! 

থ্রি গর্জেস বাঁধের ধারণা প্রথম প্রস্তাবটি ১৯১৯ সালে করা হয়। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করার জন্য চীনের ইয়াংতসে নদীকে দমন করাই মূল লক্ষ্য। এরপর এই প্রকল্পের নানা উত্থান পতনের শেষে 14 ডিসেম্বর, 1994 তারিখে, 75-বছর ধরে শুরু হওয়ার পর থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়।২০০৯ সালের মধ্যে বাঁধটি চালু ছিল, তবে ক্রমাগত সমন্বয় এবং অতিরিক্ত প্রকল্প চলছে।

কোন ঘূর্ণায়মান বস্তুর জড়তার ভ্রামক বলে একটি বিষয় থাকে যার মাধ্যমে ওই বস্তুটির কৌণিক গতির পরিবর্তন করা কতটা কঠিন তা নিরূপণ করা যায়। একটি ঘূর্ণায়মান বস্তুর অধিকাংশ ভর যদি এর ঘূর্ণন অক্ষের কাছাকাছি বিন্যাস্ত থাকে তাহলে এর যে ঘূর্ণন গতি থাকবে, ভর অক্ষের নিকট হতে পরিধির দিকে সরিয়ে নেওয়া হলে জড়তার ভ্রামক বৃদ্ধি পাবে এবং ঘূর্ণন হ্রাস পাবে। ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের কারণে এমনটি ঘটে।

এবার পৃথিবীর ঘূর্ণনের বিষয়টি চিন্তা করা যাক। পৃথিবী নিজ অক্ষ বরাবর মোটামুটি ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘুরে আসে। এখন পৃথিবীর কিছু ভর যদি কেন্দ্রের দিক হতে পরিধির দিকে সামান্য ঠেলে দেওয়া যায় তাহলে কৌণিক ভরবেগ স্থির রাখার জন্য উপরের একই নিয়মে এর গতি কিছুটা হ্রাস পাবে।

চীনের তৈরি থ্রি গোর্জ ড্যামের মাধ্যমে এই কাজটি কিছুটা করা হয়েছে। এই বাঁধের কাজ ২০০৬ সালে সমাপ্ত হয় এবং ২০১২ সাল হতে এই বাঁধে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এই বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২৫০০ মেগাওয়াট যা বাংলাদেশের সব কেন্দ্র মিলিয়ে মোট দাবীকৃত উৎপাদন ক্ষমতার চেয়েও প্রায় একতৃতীয়াংশ বেশী। কংক্রিট এবং ইস্পাতে তৈরি বাঁধটি দৈর্ঘ্যে ২৩৩৫ মিটার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ১৮৫ মিটার। এই বাঁধের মাধ্যমে যে জলাধার তৈরি হয়েছে তার গড় দৈর্ঘ্য ৬৬০ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ১.১২ কিলোমিটার।

এই বাঁধের মাধ্যমে ৩৯ ট্রিলিয়ন কেজি পানি সমুদ্র সমতল হতে ১৭৫ মিটার উপরে সঞ্চিত হয় যা পৃথিবীর ভরকে খুব সামান্য পরিমাণে হলেও কেন্দ্রের দিক হতে পরিধির দিকে ঠেলে দেয়। নাসার গবেষকগণ হিসেব করে বের করেছেন এই পরিমাণ ভরের স্থানান্তরের কারণে পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমে গেছে ৬০ মাইক্রোসেকেন্ড! এই বাঁধের ফলে পৃথিবীর বিষুব অঞ্চল আগের চেয়ে কিছুটা গোল হয়েছে এবং মেরুঅঞ্চল কিছুটা চ্যাপ্টা হয়েছে যা খুব সামান্য।  এই বাঁধের পানির কারণে মেরুর অবস্থান প্রায় ২ সেন্টিমিটার সরে গেছে।

পৃথিবীর অন্যান্য বস্তুর ওঠানামার কারণেও ঘূর্ণন গতির পরিবর্তন ঘটে। যেমন একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করলেও ভূ-পৃষ্ঠ হতে নির্মাণ সামগ্রী পরিধির দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে সমগ্র একটি শহর সার্বিকভাবে ঘূর্ণনে কিছুটা প্রভাব তৈরি করতে পারে। এর পরিমাণ খুব সামান্য হলেও তা হিসেব করে বের করা সম্ভব।

পৃথিবীর আহ্নিকগতি হ্রাসের সাথে সাথে এর নির্মাণ দেশের জন্য যেন নতুন সমস্যাগুলির একটি স্মারকলিপি তৈরি করেছে। বাঁধের অস্তিত্ব রক্ষায় ডুবে যাবে শত শত শহর স্থানান্তরিত হবে ১.৩ মিলিয়ন মানুষ। পুনর্বাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনজনিত ভূমি। থ্রি গর্জেস বাঁধ এলাকা প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। ফলে এটি হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতলগহ্বরে।

এই বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিপত্তি ও বিলুপ্তির সৃষ্টি হয়। থ্রি গর্জেস অঞ্চলটি জীব বৈচিত্র্য হটস্পট বলে বিবেচিত হয় ফলে এর দরুন বিপর্যয় যেন চোখে পড়ার মতো। চীনের নদী ডলফিন যা ইয়াংজেজ নদীর নেটিভ এবং ইয়াংৎসে ফিনলেস পিপোজাইজ পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন সিট্যাসিয়ানগুলির মধ্যে দুটি হয়ে উঠেছে।

বাধের সমস্যা থেকে বিগত সময়ে প্রদেশের মাঝেও দ্বন্ধ দেখা যায় তবে এমন মহা বিপর্যয় এই প্রথমেই দেখা গেছে। বাধের বিভিন্ন ভূমিকার কারণে কোন রাষ্ট্র সুবিধা পেলেও বড় আকারে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে পরিবেশের তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো থ্রি গর্জেস।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ