Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্লাস্টিক ডিম ও চালের রহস্যজাল!

বর্তমান সময়ে গ্রোসারি পণ্যের গুণগত মান নিয়ে সব সময়ই সংশয় থেকে যায় ক্রেতাদের মনে। ভেজাল পণ্য কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত কিনা, মেয়াদটা ঠিক মত রয়েছে এরকম হাজারো চিন্তার ছাপ থেকে যায় ভোক্তাদের মনে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিকের চাল এবং ডিম নিয়ে দুশ্চিন্তা। বিভিন্ন সময়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের নিউজ দেখে থাকি প্লাস্টিকের চাল অথবা ডিম নিয়ে। মাঝে মাঝে এর প্রভাবে বাজার দরে তারতম্য হয়। পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেনের আলোচনায় একটা সামগ্রিক ধারণা পেতে পারি। চলুন জেনে নেয়া যাক_

 

আপনাদের অনেকের ই প্রশ্ন থাকে যে প্লাস্টিকের ডিম/ চাল কিভাবে চিনব? অনেকেই আবার এর সত্যতা জানতে আগ্রহ দেখান যে, সত্যিই কি প্লাস্টিকের ডিম/ চালের অস্তিত্ব আছে কিনা?

 

বাজারের একটা মুরগীর ডিম আপনার বাসায় পৌছাতে, প্রতি পিসে খরচ হয় ৮-৯ টাকা। আপনারা জানেন যে প্লাস্টিকের ডিম বাংলাদেশে তৈরি হয় না, চীনে তৈরি হয়।

 

একটা ডিমের ওজন গড়ে ৫০ গ্রাম। তার মানে একটা প্লাস্টিকের ডিমের জন্য  গড়ে ৫০ গ্রাম প্লাস্টিক প্রয়োজন হবে। এই ৫০ গ্রাম প্লাস্টিক দিয়ে ডিমের তিনটা পার্ট মানে সাদা অংশ, কুসুম আর খোসা তৈরি করতে হবে। এসব করতে বিভিন্ন মেশিনারিজসহ অনেক জনবল প্রয়োজন হবে। এখন ঐ ডিম চীন থেকে বাংলাদেশে পাঠাতে হলে জাহাজ বা প্লেনে করে পাঠাতে হবে। তার একটা ভাড়া আছে। আবার এক দেশের পণ্য অন্য দেশে গেলে ঐ পণ্যের উপর আবগারি শুল্ক আরোপিত হয়, তাতে ঐ পণ্যের দাম আরো বেড়ে যায়। এরপর জাহাজ থেকে খালাসের খরচ, পরিবহন খরচ ইত্যাদি তো আছেই। 

 

আবার একটু আগের লাইনে চলে যাচ্ছি। বলেছি একটা ডিম তৈরি করতে গড়ে ৫০ গ্রাম প্লাস্টিকের দরকার হয়। এই ৫০ গ্রাম প্লাস্টিক দিয়ে কোম্পানি যদি একটা ডিম তৈরি না করে, একটা ৫০ গ্রাম ওজনের মগ তৈরি করে বা বাচ্চাদের খেলনাও তৈরি করে তাহলে বাজারে সেটা মিনিমাম ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। 

 

তাহলে একটা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ৪ গুন লাভ কমিয়ে প্লাস্টিকের ডিম তৈরি করবে নাকি বেশি লাভের জন্য মগ বা খেলনা তৈরি করবে? তাই এক্ষেত্রে বলাই যায় যে, প্লাস্টিকের ডিম বলে কিছু নাই। প্লাস্টিকের চালের ক্ষেত্রেও উপরের বিষয়টি বিবেচনা করলেই বুঝতে পারবেন যে, প্লাস্টিকের চাল বলেও কিছু নেই।

 

বাজারে এক কেজি প্লাস্টিকের চাল বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়। কিন্তু ঐ এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে যদি ৭ টা বাথরুমের বদনাও তৈরি করা হয়, তাহলে তার বাজারমূল্য হবে ২৮০ টাকা। তাহলে কোম্পানি কোন দুঃখে প্লাস্টিকের চাল তৈরি করবে বলুন তো? এতক্ষণের আলোচনার পরে আপনার মনে একটি প্রশ্ন এসেছে, তাহলে মাঝে মাঝে কিছু ডিমে প্লাস্টিকের ন্যায় উপাদান দেখা যায় কেন?

 

এগুলো নষ্ট ডিম। ডিমেরও কিন্তু একটা শেলফ লাইফ আছে। মুরগী একটা ডিম দিবে আর সেটা এমনিতেই মাসের পর মাস ভাল থাকবে এমনটা কখনই নয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিম সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত ভাল থাকে। আর যদি তাপমাত্রা মেইন্টেন না হয়, তাহলে সর্বোচ্চ ৭ দিন ভাল থাকবে।

 

ডিম নষ্ট হলে প্রথমের ডিমের প্রোটিনের  (সাদা অংশের) বিকৃতি ঘটে, যেটাকে প্রোটিনের ডিন্যাচারেশন বলা হয়। বিকৃতির সময় এবং ধরনের উপরে ভিত্তি করে ডিমের বিভিন্ন অংশ তখন বেশ রাবার টাইপের শক্ত হয়ে যায়, তখন সেটাকেই হয়ত অনেকেই প্লাস্টিকের ডিম মনে করেন।

 

আচ্ছা আপনি জীবনে এমন কোন প্লাস্টিক দেখেছেন, যেটা পানিতে সিদ্ধ হয়? দেখেন নি তো? তাহলে প্লাস্টিকের ডিম আর চাল কিভাবে সিদ্ধ হবে? 

 

এবার অনেকেই বলবেন যে, একসময় ফেসবুকে দেখেছিলাম একজন লোক ভাতের মুন্ড পাকিয়ে মেঝেতে ড্রপ করাচ্ছে। এটা ভাতের ন্যাচার। চালের মূল উপাদান স্টার্চ, যেটা রান্না করলে একটু চ্যাটচ্যাটে ভাব হয়। আপনি যদি মাড় না ফেলে বসা ভাত রান্না করেন, তাহলে এই চ্যাটচ্যাটে ভাবটা আরো বেশি হবে। এমন ভাত আপনি একটু শক্ত করে রান্না করলে আপনিও ভাতের দলা পাকিয়ে মেঝেতে ড্রপ করাতে পারবেন। 

 

তাই আর কোন সংশয় নয়। নিশ্চিন্তে থাকুন যে, প্লাস্টিকের ডিম আর চালের অস্তিত্ব নেই। তবে চাল ডিমসহ সবধরনের খাবার খাওয়ার সময় নিজ দায়িত্বে এগুলোর কোয়ালিটি বুঝে খাবেন। সবাই সুস্থ থাকুন নিরাপদ থাকুন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ