পুরুষ কেন না শুনতে পারে না
আজ একটি মেয়ের গল্প বলছি। ক্লাস এইটে পড়ার সময় এলাকার এক বখাটে ছেলে তার প্রেমে পড়েছিল। স্কুলের পথে, কিংবা এখানে-সেখানে বিভিন্নভাবে ছেলেটি বাচ্চা মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতো। মাঝে মাঝে হুমকি দেওয়া শুরু করলো, তার সঙ্গে প্রেম না করলে তুলে নিয়ে যাবে। মেয়েটি ভয় পেলেও তার কথায় রাজি হয়নি। ছেলেটি একদিন তার জেদ পূরণে ব্যর্থ হয়ে মেয়েটির মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারলো। একটা বখাটে ছেলের অযৌক্তিক জেদের বলি হলো ক্লাস এইটপড়ুয়া মিষ্টি একটা বাচ্চা মেয়ের ভবিষ্যৎ।
আর একটা গল্প বলছি শোনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এক ছাত্রী। দেখতেও বেশ লাবণ্যময়ী। অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার পণ নিয়ে চলে আগাগোড়া। ইদানিং তার প্রতিই কামবোধ করছে তারই বিভাগীয় চেয়ারম্যান। বয়সে পিতার সমান। তাতে কি পুরুষের এতকিছু ভাবলে চলে? কামনায় আবার বয়স কিসের! বিভিন্নভাবে টোপ ফেলা শুরু করলেই মেয়েটিকে ভোগ করা যাবে। কিন্তু যখন দেখলো, কোনো কিছুতেই মেয়েটিকে তার পাওয়া সম্ভব হলো না, তখন ক্ষমতার জালে পেঁচিয়ে দিলো একটা মেধাবী মেয়ের শিক্ জীবন নষ্ট করে। একজন ক্ষমতাধর পিতৃসম শিক্ষকের অজাচিত কামনার বলি হলো একজন মেধাবী ছাত্রী।
গল্প কিন্তু আরও আছে, হ্যাঁ কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিতে সবদিকেই সফল একজন নারী। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে ৮ ঘণ্টা মেধা ও শ্রম দিচ্ছে। অথচ কখন যে কুমির বা হাঙ্গরের মতো হা করে থাকা বসের কুনজরে পড়ে গেছে বুঝতে পারেনি। একদিন, দুদিন এই নজরকে এড়িয়ে চলতে পারলেও একদিন না একদিন হয়তো অপমানিত, অপর্যস্ত হতেই হয়। বসের বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবকে নাকচ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে সম্মান বাঁচাতে চাকরিটা ছাড়তে বাধ্যই হলো। কিংবা আপস না করার দায়ে তাকে বাধ্য করা হলো চাকরি ছাড়তে। অসম্মানজনক প্রস্তাবনার কাছে হার হলো একজন কর্মজীবী নারীর।
গল্পটি থামেনি, বলছি সংসার জীবনের এক মেয়ের কথা। একটি মেয়েকে স্বামীর মন জুগিয়ে চলার শিক্ষা পেয়েই বড় হতে হয়েছে। স্বামীর মন চাইলে তাকে ভালোবাসবে, তার যত্ন করবে, এমনকি তাদের আজ সেক্স হবে কি না, তাও স্বামিই ঠিক করছে। দিন যায়, মাস যায়। মেয়েটিকে ছুঁয়েও দেখছে না স্বামী। হঠাৎ পরকীয়ায় ছ্যাঁকা খেয়ে, ড্রিংকস করে এসে রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মুখ বুজে সহ্য করা সংসারী মেয়েটির ওপর। যখন মেয়েটি হয়তো শুধু সন্তান ও সংসারের মায়ায় নীরব নিথর হয়ে পড়ে থাকাকেই নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে, তখন এই অসহ্য ঝাঁপানো চাহিদার অপমান সে কতটা মানতে পারছে, সেটি ভাবার প্রয়োজন বোধ করে না স্বামীটি।
কোনো স্থানে যদি কোনো নারীকে পুরুষ ছেড়ে যায়, তাহলে ব্যাপারটা এমন যে; কিছু করার ছিলোনা, মেয়েটি অযোগ্য। তার সঙ্গে সম্ভব নয় আর সম্পর্ক রাখা। অথচ সেই কাজটি যদি কোনো মেয়ে করে, তাহলে মেয়েটা খুব খারাপ, এক পুরুষে হয় না।
গল্পের শেষ কোথায়! গল্পগুলোতে পুরুষের চাওয়ায় এতটা স্বার্থপরতা কেন? পুরুষেরই কেন আত্মসম্মানে আঘাত লাগে? কবে নারীদের কাছে পুরুষ ‘না’ শুনতে অভ্যস্ত হবে?