মানসিক ভারসাম্যহীনের সন্তান প্রসব: জাতির বিবেকের প্রতি প্রশ্ন তোলে
আমাদের সমাজে আজও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে যখন প্রশ্ন তোলা হয়, তখন অনেকেই একবাক্যে নারীকেই দোষারোপ করেন। এক্ষেত্রে বলা যায়, যৌন-হয়রানি বা ধর্ষণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর কথা। যখন কোনো নারী যৌন-নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হন তখন এই সমাজের কিছু মানুষ নারীর পোশাক নিয়ে কথা বলেন।
এই পোশাকের দিকে তীব্র-তীর্যক মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বা তারা অপরাধকারীকে প্রশ্রয় দেন। তাদের মন্তব্য অনুযায়ী নারীদের পোশাকই পুরুষকে যৌন উত্তেজক করে তোলে! ফলে নারীর পোশাকের ধরন যেমন, ঠিক তেমনই তার সঙ্গে ব্যবহার করে হবে৷
তবে এই মন্তব্যকারীরা পুরুষতান্ত্রিক হীন মানসিকতার ধারক-বাহক। ফলে শিশুকন্যা থেকে বোরকাধারী নারী এমনকি বর্তমানে ছেলে শিশুও এদের কুনজর থেকে রেহাই পান না। আবার এই ভণ্ড শ্রেণি সেটা স্বীকার করতে নারাজ। বিষয়গুলোর অবতারণা এ কারণে যে, এ সমাজে নারীকে প্রতিনিয়ত পণ্য ভাবা হয়। আর তার চেয়ে আরও বড় কারণ নারীর সঙ্গে অপ্রীতিকর কোনো কিছু ঘটলেই নারীকেই দোষারোপ করা হয়। কটুকথা বলা হয় নারীকেই! কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য নারীরা আসলেই কতটা দায়ী? কেন এ সমাজ নারীর ওপর জোর করে দায় চাপিয়ে দেয়? কেনই বা নারীকে শুধু ভোগের সামগ্রী ভাবা হয়! আজ অবধি এই সমাজের এমন কূপমন্ডুকতা জীবন চলার পথে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। তবু এ সমাজের কোনোই ভ্রূক্ষেপ নেই!
নারীর এমন পরিস্থিতির শিকারে পরিণত করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবু বারবার কেন এমন ঘটনা ঘটছে এই সমাজে। আর কেনই বা নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এভাবে। গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, চট্টগ্রামে সড়কের পাশে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরানো মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ও তার নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এক শিক্ষার্থী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে নবজাতকসহ ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীকালে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার জামালখান এলাকার ইনোভা হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ভারসাম্যহীন নারী ও নবজাতক বর্তমানে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নারীর সঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ প্রধানত বিকৃত মানসিকতা। কতটা নিচু মানসিকতা হলে এ সমাজে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীও কিছু নরপশুদের থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ভাবলে অবাক হতে হয় শুধু নারী হওয়ার কারণে, শুধু একতাল মাংসপিণ্ডের কারণে নারী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়েও এসব পশুরা তাকে ভোগ করছে! নারীর পোশাককে দায়ী না করে সমাজের মধ্যে কদর্য মানসিকতাকে চিহ্নিত করা উচিত। যে বা যারা নারীর পোশাককে দায়ী কারেন তারা সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রামের ঘটে যাওয়া ঘটনার কী ব্যাখ্যা দেবেন! না কি এখানেও এই মানসিক ভারসম্যহীন নারীরই দোষ!
মূলত আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। একইসঙ্গে নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। নারীকে যদি শ্রদ্ধা করা না যায়, তবে এ সমাজে কোনোদিন নারীর মুক্তি মিলবে না। শিশুকন্যা থেকে ভারসম্যহীন নারী; সবাইকে এই বিকৃত রুচির মানুষের হিংস্রতার শিকার হতে হবে! তাই এখনই সময় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। এর জন্য ছোট থেকেই সন্তানকে পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার শিক্ষা দিতে হবে। নারীর মুক্তি ঘটলে তবেই এ সমাজ এগিয়ে যাবে।