কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ
আজ বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১১ তারিখ। ঠিক এমনই এক দিনে ১৪২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যে যার রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান। যার কলম কখনো কথা বলতো সমতা নিয়ে, কখনো রাজনীতি নিয়ে আবার কখনো ভালোবাসা নিয়ে। তাঁর লেখার এই বিভিন্নতা তাকে এনে দিয়েছে সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবির মতো বিভিন্ন তকমা ।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। প্রতিবছরই এই দিনটিকে ঘিরে করা হয় বেশ কিছু আয়োজন। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তেমন কোন আয়োজন থাকছে না। তবে আজ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।
জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে এ বছর ছায়ানটের নিবেদন ‘শান্তির জয় হোক’। অনুষ্ঠানটি আজ রাত ৮ টায় প্রচারিত হবে ছায়ানটের ফেসবুক গ্রুপ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন ‘কবি স্মরণ’ রাত ৯টায় সংগঠনের ফেসবুক পেইজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হবে।
এছাড়াও, নজরুল একাডেমি জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে বাণী প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, 'বাংলা সাহিত্য-সংগীতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। নজরুলের লেখনী থেকেই আমরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।'
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেছেন, 'জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি নজরুল ছিলেন বাঙালি জাতির রাজনৈতিক মুক্তি-সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী।'
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। তার জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে দরিদ্রতা ও দুঃখ-দুর্দশায়। পিতাকে হারিয়েছিলেন বেশ অনেক ছোটবেলায় ৷ তাই দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করতে মাত্র দশ বছর বয়সে জড়িয়েছেন বিভিন্ন ধরনের পেশায়। কখনো মক্তবে শিক্ষকতা, মাজারের খাদেম আরো কত কি। কিন্তু এসব কাজে তিনি বেশিদিন স্থায়ী হননি।
এরপর তিনি যোগ দেন নাট্যদলে। তিনি নাট্যদলে থাকাকালীন প্রচুর লোকসঙ্গীতের রচনা করেন।১৯১৭ সালের শেষদিক থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে একজন সেনা হিসাবেও কাজ করেন ।
১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলাম স্বপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। দেশে আসার পর বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।
দীর্ঘ সময় ধরে রোগভোগ করেন এই বিদ্রোহী কবি৷ ৩৪ বছর নির্বাক জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি। এরপর ৭৭ বছর বয়সে ১৯৭২ সালের ২৯ আগস্ট পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় অবদান রাখা এই কবি।