Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে কতটা বেরোতে পেরেছে নারীরা? 

পুরুষতান্ত্রিকতা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এতটাই গভীর ভাবে প্রবেশ করে গেছে যে, প্রগতিশীল সমাজের কয়েক যুগ পেরিয়ে এসে এই একবিংশ শতাব্দীতে নিজের যোগ্যতাকে তুচ্ছ করে, বলতে হয় 'আমি কার মেয়ে!' 

 

কোন ঘটনার কথা বলছি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? এলিফ্যান্ট রোডের সেই মানব সেবক ডাক্তার, পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির কথাই বলছি। 

 

ভাইরাল সেই ভিডিও চারদিকে সমালোচনার তুমুল ঝড় তুলে দিয়েছে। কারোর  কাছে এঙ্গেলটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে একজন মহিলাকে হয়রানি করাটা দোষের যিনি আবার ডাক্তার, কারোর কাছে ডাক্তারের ঔদ্ধত্য আচরণ করে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করাটা দোষের। 

 

কিন্তু আইনের রক্ষক হিসেবে পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবেন, সকলের প্রতি আইন সমান এমন দৃষ্টান্ত দেখাবেন সেটাই আশা সকলের।  আর সে লক্ষ্যে এই কঠিনতম সময়ে পুলিশরাও আমাদের নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে  সেবা দিয়ে যাচ্ছেন,  তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
 

কিন্তু এভাবে কি ভেবে দেখেছেন, একজন নারী যিনি চিকিৎসকের মত মহান পেশার পেশাদারিত্ব করেন, তাকে সামান্য একটা ভুলের জন্য বিপরীত পাশের মানুষকে নিজের বাবার ক্ষমতা দেখাতে হয়। অথচ এই মহামারীর সময়ে যিনি কিনা সৃষ্টিকর্তার পরেই বাঁচার ভরসা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কত মানুষ এইসময়ে চিকিৎসা না পেয়ে, চিকিৎসক না পেয়ে মারা যাচ্ছেন।  

 

সেখানে তিনি একজন মানুষ বাঁচিয়ে তোলার সহায়ক। এত যোগ্য হয়েও এমন পরিস্থিতিতে থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাকে  বাবার নামের ক্ষমতা দেখাতে হয়। তাকে বলতে হয় তার বাবা কতটা ক্ষমতাশালী। তাহলে কি তিনি নিজের যোগ্যতা, নিজের পরিচয়কে নিজের ক্ষমতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন না!  

একটা অপ্রীতিকর ঘটনায়  সমাজের উঁচু পর্যায়ের তিনজন কর্মকর্তা নিজেদের বাবা কে ছিলেন,তার ক্ষমতা কতখানি, সেসব নিয়ে একে অপরের সাথে তর্ক যুদ্ধে লড়ছেন। প্রশ্ন থেকে গেলো এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে এতো শিক্ষা আর উন্নতির পর আমরা কতটা সুশীল সুশৃঙ্খল হতে পেরেছি?

নারীর সম্মান, নারীর স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা, নারীর যোগ্যতার লড়াই আর পুরুষের পাশাপাশি সমান যোগ্য হয়েও  নারীরা কতটা আত্মপরিচয়ে বিশ্বাসী হতে পেরেছে? যে নারীরা এ সমাজে লড়ে যাচ্ছেন সে নারীরাই কতটা পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে বেরোতে পেরেছে?

'আপনি জানেন আমার বাবা কে?' এই ক্ষমতা না দেখিয়ে আমি একজন ডাক্তার, আমি মানুষের সেবা করি কিংবা আজ পরিচয়পত্র টা নিতে ভুলে গেছি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে  নিজ কর্মস্থলে কতটা যেতে পেরেছে ? 

এই পুরুষ শাসিত সমাজে একজন নারী হয়ে লড়াই করে নিজের সম্মান আর যোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করে, নিজেরাই পুরুষতান্ত্রিকতাকে আবার কতটা জিতিয়ে দিয়েছে? 

 

তাহলে কি এ সমাজের প্রতিষ্ঠিত নারীরাই এখনো পারেনি পুরুষতান্ত্রিকতার বেরিকেট ভেঙে বেরিয়ে আসতে?

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ