একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য নকশী কাঁথা তৈরি করে সাড়া জাগিয়েছেন উত্তরবঙ্গের নারী উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম। নকশী কাঁথা তৈরি করে শুধু নিজে সফলতা অর্জন করেননি বরং এলাকার বিভিন্ন হত-দরিদ্র পরিবারের সাড়ে তিনশ' নারী সদস্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই নারী উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগমের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বামনের হাট গ্রামে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে গ্রামের কয়েকজন নারীকে বাড়িতে ডেকে এনে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শিখিয়ে দিতেন মর্জিনা বেগম। এরপর তাদেরকে সাথে নিয়ে বাড়িতে বসে নকশী কাঁথা সেলাই করতেন। সেই কাঁথা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে যা লাভ হতো তাই সকলের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। প্রথমে কেউ আসতে না চাইলেও পরে তার কাছে কাজের জন্য এলাকার বিভিন্ন নারীরা আসতে থাকেন। এরপর নিজ প্রচেষ্টায় অসহায় নারীদের নিয়ে 'তবকপুর মহিলা উন্নয়ন সমিতি' নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন।
তবকপুর মহিলা উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে নিজ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নারীদের নিয়ে নকশী কাঁথা, বালিশ ও বালিশের কভার, শাল ও শাড়িতে ফুল তোলা, পাট দিয়ে গয়না, কাপড়ের গয়না, পাপসসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী তৈরি করে আসছেন। তার কারখানায় প্রতিমাসে দুই হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন একেকজন নারী শ্রমিক। এই অর্থ দিয়েই চলছে তাদের সংসার। পাশাপাশি চালাচ্ছেন সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ।
তাদের দাবি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মর্জিনা বেগমের মতো উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ালে দারিদ্রতম এ জেলায় ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটার পাশাপাশি সৃষ্টি করবে কর্মসংস্থান, ভূমিকা রাখতে পারবে জাতীয় অর্থনীতিতেও।
২০১৯ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বেঙ্গল ক্রাফটের সাথে অর্ডার পান মর্জিনা বেগম। সেখানে এক বছর কাজ করার পর করোনার কারণে অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২০সালে ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের নদী লিমিটেডের সাথে নতুন করে চুক্তি হয়। এখন তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করছেন তিনি। তার তৈরি করা নকশী কাঁথা, শালসহ দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী বিভিন্ন মেলাসহ ঢাকার বড় বড় শো-রুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিনে মর্জিনা বেগমের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মর্জিনা বেগম। আর এসব কাজ দেখাশুনা করছেন সংগঠনের উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম। এ সময় কথা হয় কারখানায় কর্মরত রুমিনা আক্তার, রুমি, লাকি বেগম ও ইতি আক্তারসহ অনেকের সাথে। তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি নকশী কাঁথা তৈরি করেন। তারা বলেন, একটি করে নকশী কাঁথা তৈরি মজুরি পান ৫০০ টাকা। মাসে ৫-৬টি কাঁথা তৈরি করে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা আয় করেন তারা, যা দিয়ে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারের আয় বাড়ছে।
উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো আমাকে সহযোগিতা করলে আমার ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিসিকের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে সাহায্য করলে সাড়ে তিনশ নয়, এ এলাকার অসহায় দরিদ্র সাড়ে তিন হাজার নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারবো।
কুড়িগ্রাম বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মর্জিনা বেগমকে আমরা উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে এক লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তার তৈরিকৃত পণ্য সামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করা হচ্ছে।