Skip to content

উৎসবের আমেজে যেনো ত্রুটি না হয় শরীরে

ঈদ আসে, ঈদ যায়, কিন্তু রেখে যায় কিছু পরিবর্তনের ছাপ। রমজানের এক মাস রোজা রাখার অভ্যাসের পর ঈদের আনন্দে অনেকের খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায়। দীর্ঘ এক মাসের পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস ঈদের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে। তবে এই সময়ে অনেকেই অসাবধানতাবশত অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার কারণে নানা শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। ঈদের আগে থেকে শুরু করে ঈদের পরবর্তী কয়েকদিন বেশির ভাগ মানুষই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, যা শরীরের ওপর নানা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।  

বিশেষ করে এবার গরমের তীব্রতা বেশি, যা বাড়তি কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঈদের পর শরীরের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঈদের পর কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে এবং তা প্রতিরোধের উপায়।  

ঈদের পর সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি ঈদ-পরবর্তী সময়ে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—  

কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা  
অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি  
ডায়রিয়া ও আমাশয়  
এসিডিটি, গ্যাস ও পেটের ব্যথা  
বমি বমি ভাব ও বদহজম 
উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়া  
রক্তের চর্বি (কোলেস্টেরল) বেড়ে যাওয়া  
স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি
পানিশূন্যতা ও খাবারে অরুচি  
ঘুমের সমস্যা ও অতিরিক্ত ক্লান্তি  

এই সমস্যাগুলো এড়াতে সচেতনভাবে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি।  

কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা প্রতিরোধে করণীয় 

– প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার খান, যেমন—সবজি, সালাদ, ফলমূল, শসা, লেবু ও কাঁচামরিচ।  
– মাংস খেতে পারেন, তবে পরিমাণে কম ও স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করা মাংস (যেমন—স্টু বা গ্রিল) খাওয়ার চেষ্টা করুন।  
– টক দই, মাঠা বা ঘোল খেলে হজম ভালো হবে।  
– অতিরিক্ত ঝাল-মসলা ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ায়।  
– গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।  

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

– ঈদের পর ক্যালরি হিসাব করে খাবার খান।  

– অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।  

– চিনি খাওয়ার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন। পরিমিত গুড় বা খেজুর ব্যবহার করতে পারেন।  

– প্রোটিন গ্রহণের দিকে নজর দিন, বিশেষ করে লিন মিট ও মাছ বেশি খান।  

– নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।  

রক্তচাপ ও সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় 

-অতিরিক্ত লবণযুক্ত ও প্রসেসড খাবার পরিহার করুন।  

– মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খান এবং সাদা চিনি এড়িয়ে চলুন।  

– নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন।  

– পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়।  

পানিশূন্যতা ও ক্লান্তি এড়াতে যা করবেন  

– প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন।  

– চা-কফির পরিমাণ কমান, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর চা-কফি পান না করাই ভালো।  

– বাজারের কোমল পানীয় পরিহার করুন, বরং ঘরে তৈরি শরবত, ফলের জুস ও ডাবের পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন।  

– পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, কারণ ঘুম কম হলে শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ে।  

ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন

– ঈদের পর শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি।  

– প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা স্ট্রেচিং করুন।  

– কর্মব্যস্ত জীবনে শরীরচর্চার জন্য কিছুটা সময় বের করার চেষ্টা করুন।  

সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন

ঈদের আনন্দের পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে ঈদের পর যে শারীরিক সমস্যা হতে পারে, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব শুধুমাত্র কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে। তাই ঈদের পর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে গুরুত্ব দিন, যাতে কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরে গিয়েও সুস্থ ও ফিট থাকতে পারেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ