নারীর সুস্থতার সাতকাহন

‘অসুস্থ হওয়ার সুযোগ কই! অসুস্থ হলে সবকিছু কে সামলাবে!’ স্বজনদের কেউ কোনো নারীর কাছে শারীরিক সুস্থতার কথা জানতে চাইলে এরকম অসহায়ত্বই ফুটে ওঠে অনেক নারীর কথায়। নারীরা প্রতিদিন গৃহস্থালি কাজে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় দেন সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক রকম পরিশ্রমের। আর পেশাজীবী নারী হলে তো কথাই নেই, ঘরে-বাইরে দুই জায়গাতেই খাটতে হয় সমান তালে। ঘর-বাহির সামলাতে গিয়ে অনেক নারীই যেন নিজের শারীরিক-মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকির কথা ভাববার সময় পান না। দেখা গেছে পুরুষরা নিজেদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে যতটা সচেতন, নারীরা এই বিষয়ে বড়ই উদাসীন। অথচ নারীদের শরীর পুরুষদের তুলানায় অনেক বেশি জটিল। তাই নারীদেরকে তাদের শরীরের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে।
পুরুষদের তুলনায় নারীরা মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন বেশি, কিন্তু চিকিৎসা পান কম। দেশের প্রধান দুটি মানসিক হাসপাতালে নারীদের জন্য শয্যার সংখ্যাও অনেক কম। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিকভাবে অসুস্থ নারীর যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ার পথে বাধা লোকলজ্জা, কুসংস্কার আর পরিবারের অবহেলা। একজন নারী যদি শিক্ষিত না হন, তিনি জানতেই পারবেন না তার নিজের প্রতি নিজের করণীয় কী। একজন মানুষ নারী কিংবা পুরুষ, তিনি নিজে যদি সুস্থ, স্বাভাবিক, উৎফুল্ল না থাকেন, তাহলে তিনি তার চারপাশের মানুষগুলোকেও ভালো রাখার ক্ষমতা দিন দিন হারিয়ে ফেলেন।
শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামের নারীদের সুবিধার দিক হলো গ্রামের নারীরা একটু সচেতন হলেই নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জায়গাটুকু সহজেই পূরণ করতে পারেন। গ্রামে প্রায় বাড়িতেই পতিত জমি, উঠান বা আঙিনা থাকে। নারীরা চাইলেই সেখানে নানা ধরনের শাক-সবজি বা ফলের চাষ করতে পারেন। চাষ করতে পারেন নানাধরনের ঔষধি গাছও। অথবা পালন করতে পারেন হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল। যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য শুধু উপকারিই নয়, প্রয়োজনীয়ও বটে। অথচ অনুতাপের বিষয় হলো- যখন আপনি একজন নারীর প্রতিদিনের কাজকর্ম খেয়াল করবেন, সেখানে পরিবারের সমস্ত সদস্যদের জন্য অগণিত কাজের বণর্না পাবেন। কিন্তু এমন কাজের হিসাব খুব কমই মিলবে, যেখানে নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে গুরুত্ব সহকারে করে থাকেন। এমনকি খাবার গ্রহণের বিষয়েও তাদের ভেতর পযার্প্ত অনীহা বা অসচেতনতা লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিটি নারীই হতে চান একজন ভালো মা, ভালো স্ত্রী, ভালো বোন, সবোর্পরি একজন ভালো মানুষ। কিন্তু এসবের কোনটিই সম্ভব হয় না, যখন তিনি অসুস্থ থাকেন। জীবনকে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে পরিচালনার জন্য আবেগ, অনুভূতির কাযর্কর অবস্থার সৃষ্টি করা জরুরি এবং এসব ব্যক্তি মানুষের নিজের ওপর বর্তায়। তার জন্য ব্যক্তিকে আগে নিজে ভালো থাকতে হবে, নিজের প্রতি নিজের দায়িত্বগুলো সচেতনতার সাথে পালন করতে হবে। যা পরোক্ষভাবে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠবে।
যে দেশের নারীরা আজ ফুটবল খেলছে, পাইলট হচ্ছে কিংবা এভারেস্ট জয় করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, সে দেশে নারী স্বাস্থ্য নিয়ে এত অবহেলা? বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতির পাশাপাশি নারী স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আজকের যুগে এতটা অবহেলা ভাববার বিষয় বৈকি! আমাদের গ্রামেও আজকাল মেয়েরা আগের মতো ফ্রক থেকে শাড়ি নয়, অনেকেই পরছে সালোয়ার কামিজ বা ম্যাক্সির মতো পোশাক গ্রামের ছেলেরাও কম যায় না লুঙ্গির পরিবর্তে ওদের গায়ে এখন টি-শার্ট আর জিন্স প্রশ্ন হলো, কাপড়ের ক্ষেত্রে আধুনিক হতে পারলেও, মাসিকের সময় স্বাস্থ্যের খাতিরে আমার দেশের মেয়েরা, দেশের মানুষরাআধুনিক হতে পারেনি কেন?
দেশে এ সব বিষয়ে সরাসরি কথা বলা এবং সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন মাসিক সম্পর্কে যেসব কুসংস্কার রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে অনেক আগেই বলা বাহুল্য, নারীর স্বাস্থ্যের ওপরই নির্ভর করে পুরো পরিবারের স্বাস্থ্য তাই পরিবারের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীর সহযোগিতায়।