Skip to content

জাফরান এত দামি কেন?

জাফরান এত দামি কেন?

বিশ্বের দামি মসলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল জাফরান। একে ‘লাল সোনা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই জাফরান ব্যবহার হয়ে আসছে। কথিত আছে, প্রাচীন গ্রিসের মিনোয়ানরা প্রায় ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথমবার জাফরান ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। সেই সময় রান্নার পাশাপাশি এটি রঙের জন্য এবং সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত হত। এমনকি মিসরের বিখ্যাত রানি ক্লিওপেট্রা নিজেকে আরও সুন্দর করে তুলতে জাফরান মিশ্রিত দুধে গোসল করতেন।

তবে জাফরান এত দামি কেন? এর কারণ হলো এর উৎপাদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য। এক কেজি জাফরান উৎপাদন করতে প্রায় ১৫০,০০০টি ক্রোকাস ফুল প্রয়োজন হয়। এই ফুলের তিনটি অংশ থাকে। লাল স্টিগমা, পুংকেশর ও পাপড়ি থেকে শুধুমাত্র লাল স্টিগমাটি সংগ্রহ করা হয়। এটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে হাতে বাছাই করা হয়। এরপর এই স্টিগমাগুলি ২০ দিন ধরে রোদে শুকানো হয়। এতে প্রায় ৩৭০ থেকে ৪৭০ ঘণ্টা সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময় এবং জটিল প্রক্রিয়ার কারণে জাফরান এত ব্যয়বহুল। বর্তমানে এক কেজি জাফরানের দাম প্রায় ১০,০০০ ডলার বা প্রায় ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ টাকা। 

সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জাফরান উৎপাদিত হয় ইরানে বিশেষ করে ইরানের খোরাসান অঞ্চলে। এটি বিশ্বের ৯০% জাফরান উৎপাদন করে। এছাড়া ভারতের কাশ্মীর এবং আফগানিস্তানেও জাফরান চাষ হয়।

ভালো মানের জাফরান সাধারণত উজ্জ্বল লাল বা কিছুটা কমলা রঙের হয়ে থাকে। এর গন্ধ খুবই তীব্র এবং সুগন্ধি হয়। আপনি যদি নিম্নমানের জাফরান দেখেন তবে তা সাধারণত মলিন বা হালকা রঙের হয়ে থাকে এবং গন্ধ তেমন ভালো হয় না। আবার আঠালো বা আর্দ্র অনুভূতি হতে পারে।

জাফরান শুধুমাত্র রান্নার জন্য নয়। বরং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও এর নানা উপকারিতা রয়েছে। এটি মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। এটা মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং সুস্থ মেজাজ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

অতএব, জাফরান শুধুমাত্র একটি মূল্যবান মসলা নয়। এটি স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি বিশ্বের অন্যতম দামি মসলা হলেও এর উপকারিতা ও গুরুত্ব পৃথিবীজুড়ে স্বীকৃত।