হতাশা দূরীকরণের উপায়
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে আমরা কখনো না কখনো, কোন বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হই আর এটা স্বাভাবিক। সাধারণত কোনো ইচ্ছাপূরণ না হলে, কাজে ব্যর্থ বা কাজের আশানুরূপ ফল না পেলে যে মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয় তা হলো হতাশা। তাছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না হলে হাল ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা-ই হতাশা।
হতাশা একটি মানবিক অনুভূতি। যার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি কখনও মানসিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। হতাশ হলে ব্যক্তির মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানুষিক সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন: ব্যক্তি মনমরা হয়ে থাকে, কোনো বিষয়ে আনন্দ খুঁজে পায় না, মনোযোগের অভাব ঘটে, ঘুমের সমস্যা হতে পারে, খাওয়ার সমস্যা হতে পারে, আবেগের তারতম্য হতে পারে, অনেক সময় দুর্বল লাগে, মাথা ঘোরে, কাজের গতি কমে যাওয়া, অন্যমনস্ক থাকা, নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে নেওয়া, এমন কি সুইসাইডও করতে পারে।
হতাশা দূরীকরণের উপায় :-
১। হতাশার কারণ কি সেটা অনুসন্ধান করা
হতাশা দূর করতে হলে কি কারণে হতাশায় ভুগছেন সেটাকে অনুসন্ধান করা এবং তারপরে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা যদি হতাশার নির্দিষ্ট কারণ-ই না জানি তাহলে হতাশা মুক্ত হবো কি করে। তাই সর্বপ্রথম হতাশার কারণ খোঁজো এবং সেই কারণ অনুযায়ী সেটাকে কাটানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করো।
২। মনের কথা বা সমস্যা খুলে বলা
অনেক সময় আমরা মনের কথা মনে জমাতে থাকি বা কোনো সমস্যার কথা কাউকে জানাই না বা জানাতে ভয় পাই। তার ফলে একধরনের চাপা হতাশায় ভুগতে থাকি। এমনও হতে পারে যে সমস্যায় ভুগছেন তার সমাধান সামনের ব্যক্তির কাছে আছে। তাই মনে কথা সবার সাথে শেয়ার করতে হবে। এতে মনটাও অনেকটা হালকা হবে ও হতাশা দূরীভূত হয়ে যাবে।
৩। নিজেকে ব্যস্ত রাখা
হতাশা দূর করার আর একটি অন্যতম উপায় হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা। মানুষের যখন কোনো কাজ থাকে না তখন মানুষ অনেক ধরনের উল্টো পাল্টা চিন্তা করে আর অটোমেটিক ডিপ্রেশনে চলে যায়। তাই সব সময় নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে, সে যে কোনো কাজ হতে পারে।
৪। বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো
আপনি হতাশায় ভুগছেন তাহলে ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের সাথে কিছু সময় কাটান দেখবেন হতাশা কোথায় উড়ে চলে গেছে। কারন পৃথিবীতে বন্ধু হলো এমন একটা জিনিস যেখানে কোনো রকম বাধা বিপত্তি নেই কথা বলার। অনেক সময় এমন কতগুলো বিষয় থাকে যেগুলো ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করা যায় না কিন্তু বন্ধুদের সাথে তা অনায়াসে বলা যায়।
৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
অনেক সময় এই পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানোর জন্য মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একজন মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিক থাকার জন্য অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। দিনের পর দিন ঘুম কম হলে একজন মানুষ ডিপ্রেশনে চলে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
৬। প্রাণ খুলে হাসা
হাসি হলো একটা অমূল্য সম্পদ। মানুষ যদি হাসতে না পারত তাহলে মানুষ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো। যে মানুষ যত হাসবে সে মানুষ ততটাই সুস্থ বোধ করবে। হাসি মানুষের মধ্যে জমতে থাকা ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তাকে কমিয়ে হালকা করে দেয়।
৭। খেলাধুলা করা
নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে হতাশা থেকে খুব সহজেই মুক্তি লাভ করা যায়। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন সহ নানা ধরণের খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে আমাদের দেশে। এসব আউটডোর খেলায় যোগ দেওয়া সম্ভব না হলে বিভিন্ন ইন্ডোর গেম যেমন ক্যারাম, লুডু, দাবা ইত্যাদি খেলাতেও ব্যস্ত রাখতে পারেন নিজেকে। তাতে শরীর ও মাইন্ড ফ্রেশ হয়।
৮। বাস্তববাদী হওয়া
অনেকে চারদিকের নানা মানুষের নানা ধরনের কথা শুনে আপাদমস্তক চিন্তিত হয়ে হতাশায় ভোগেন। কিন্তু এটা ঠিক না, মানুষ কি বলছে না বলছে সেদিকে কান না দিয়ে, চোখ কান খুলে বাস্তববাদী হওয়া জরুরী।
৯। বই পড়া
হতাশা থেকে মুক্তি পেতে বই পড়তে পাড়েন। কারন বই একটি এমন মূল্যবান জিনিস যা মানুকে উন্নত থেকে আরো উন্নততর গড়ে তোলে। যখন মন খারাপ বা হতাশায় ভুগছেন তখন যে কোনো বই পড়েন সেটা গল্প, উপন্যাস, নাটক, কারো জীবনীর বই হতে পারে। দেখবেন হতাশা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
১০। ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন করা
মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সাহায্য করে। রোজ ব্যায়াম করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন ও হতাশা মুক্ত জীবনযাপন করেন ।খুব বেশি হতাশা-জনিত কারণে মানসিক সমস্যা হলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষত্বের সুপরামর্শ নিতে হবে।