জুতা কেনার জন্য বাজেট কেমন হওয়া উচিত

ঐতিহ্যগতভাবে ঈদের সব কেনাকাটার পর সবশেষে কেনা হয় এক জোড়া জুতা। কেননা জুতা কেনা হয় ঈদের ‘আসল’ যে পোশাক, সেটির সঙ্গে মিলিয়ে। হ্যাঁ, অনেকেরই, বিশেষ করে কম বয়সী বা তরুণীদের ঈদের পোশাক হয় একাধিক। এর ভেতর সবচেয়ে জমকালো, তুলনামূলকভাবে বেশি দামের পোশাকটি হয় ঈদের আসল পোশাক। বাকি পোশাকগুলো ‘নায়কের বন্ধু’। তাই আসল পোশাকটি হাতে না আসা পর্যন্ত কেউ জুতার দোকানে খুব একটা পা মাড়ান না।
কিন্তু সত্যিকার মার্জিত, রুচিশীল ফ্যাশনিস্তারা ঈদে কখনো এই একটা শর্ত মাথায় রেখে জুতা কেনে না। ঈদ উপলক্ষে কেনা একমাত্র যে অনুষঙ্গটি প্রয়োজন বুঝে সারা বছরই পরা হয়, সেটি হলো জুতা। ঘর থেকে এক পা বের হলেই প্রয়োজন এক জোড়া জুতা। আর পোশাক যতই স্টাইলিশ হোক না কেন, বেমানান জুতাই আপনার লুক নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। ঈদের ফ্যাশনেও কথাটি শতভাগ খাঁটি। বছরজুড়ে নানা উৎসব লেগেই থাকে। বিয়ে, জন্মদিন, পার্টি, দাওয়াত, গেট টুগেদার, বাইরে খাওয়াদাওয়া—অনুষ্ঠানের যেন শেষ নেই। অনেকেই এসব স্থানে পরা যায়, এমন এক জোড়া জুতা ঈদ সামনে রেখে কিনে রাখেন। তাই তাঁরা ঈদে জুতা কেনেন মূলত তিনটি শর্ত পূরণ করে—
১. ঈদের আসল পোশাকের সঙ্গে মানানসই।
২. আরামদায়ক অথচ স্টাইলিশ।
৩. বছরজুড়ে বিভিন্ন আয়োজনে পরার উপযোগী।
ফরমাল চাকরিজীবী পুরুষেরা ঈদের আগেও জুতার দোকানে গিয়ে তাই চামড়ার জুতা বা অক্সফোর্ড শুর তাকে চোখ বোলান। কেননা ঈদ তো এক দিন, কিন্তু অফিসের মিটিং, প্রেজেন্টেশন, কনফারেন্স তো সারা বছর ধরে লেগেই আছে! কালো রঙের স্যুটের সঙ্গে কালো জুতাই বেশি মানানসই। তবে ধূসর রঙের স্যুটের সঙ্গে কালো, ধূসর ও বাদামি, মেরুন বা পীত রঙের জুতাতেও দেখাবে স্টাইলিশ।
তরুণীদের ক্ষেত্রে কালো বা বাদামি রঙের দুই বা আড়াই ইঞ্চি উঁচু নরম লেদারের হিল প্রায় সব আয়োজনে ও সব পোশাকের সঙ্গেই পরা যায়। মহামারিকালের পর থেকে হিলের আবেদন কমলেও ব্লক হিল, মিউজ বা পাম্পস চলছে সদর্পে। স্টিলেটো, প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েজেসের সেই জায়গা এখনো ব্যালেরিনা শুর দখলে। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব বা একটু বয়স্ক নারীদের প্রথম পছন্দ ব্যালেরিনা শু।
ঈদ উপলক্ষে বাটা স্টারলাইট নারীদের জন্য নিয়ে এসেছে আধুনিক নকশার ক্রিস্টাল ট্রেন্ডিং হিল। পুরুষদের জন্যও থাকছে নানা রকমের ড্রেস শু, মোকাসিন, সামার স্যান্ডেল ও গরমকালের উপযোগী অন্যান্য ফ্যাশনেবল জুতা।
বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশি ধাঁচের পায়জামা–পাঞ্জাবির সঙ্গে মানানসই হবে নাগরা, চটি বা ফিতাওয়ালা চপ্পল। এক জোড়া জুতা কেনার পর টাকা বেঁচে গেলে আসল জুতার পাশাপাশি এ রকম কিছু একটাও কিনে নিতে পারেন। স্যুট বা শেরওয়ানির সঙ্গে ফিতাওয়ালা জুতা ও লোফার পরতে পারেন। সেমিফরমাল স্টাইলিশ লুকের জন্য লোফারের তুলনা হয় না। নারী-পুরুষ এখন কেবল শীতকাল নয়; বরং সারা বছরই লোফার পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ভার্সিটির ক্লাস, আউটিং বা ট্রাভেলেও দিব্যি মানানসই লোফার।
ঈদের দিন ছাড়াও পার্টিতে বাদামি বা অন্য যেকোনো রঙের জুতা বা স্যান্ডেল, ভেলভেট বা রেশমি স্যান্ডেলও পরতে পারেন। তবে পোশাকের ধরন ও ব্যাগের রঙের সঙ্গে মিল রেখে জুতা নির্বাচন করা ভালো। পায়ে যা-ই পরুন, খেয়াল রাখুন আপনার ব্যক্তিত্ব, পোশাক ও যেখানে যাচ্ছেন, সেই আবহের সঙ্গে যেন যায়।
ভ্রমণে বেশির ভাগ সময়ই ছেলেদের জিনসের প্যান্ট আর টি-শার্ট পরতে দেখা যায়। এর সঙ্গে স্নিকার্সই ভালো মানাবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে জিনসের সঙ্গে ফ্ল্যাট জুতা মানিয়ে যাবে। শাড়ির সঙ্গে ফ্ল্যাট কিটেন হিল দিব্যি মানিয়ে যায়। শাড়ির সঙ্গে সামান্য উঁচু জুতা শাড়ির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
সময়ের সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে ব্রগস জুতার। এর আকর্ষণ হলো দক্ষ সুনিপুণ কারুকাজ। দেখতে খুবই স্টাইলিশ। তবে শীতকালে পরার জন্য বেশি উপযোগী। আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল থাকতে ঈদে চট করে এক জোড়া কেডস বা কনভার্সও কিনে ফেলতে পারেন।
জুতা ভালোভাবে দেখে, শুনে, বুঝে, ট্রায়াল দিয়ে কিনুন। জুতার রং, নকশার পাশাপাশি সোলও ভালোভাবে দেখে কিনুন। জুতার সোল শক্ত হলে নেবেন না। কেননা পায়ে ব্যথা পাবেন। আর জুতাটা টেকসইও হবে না। সহজে বাঁকানো যায়, এমন সোল বাছাই করা উচিত। হিল জুতা কেনার পর মুচির কাছ থেকে হিলের নিচে অতিরিক্ত একটা সোল লাগিয়ে নিলে অনেক দিন ভালো থাকবে। খুব আঁটসাঁট জুতা না নেওয়াই ভালো। জুতা যেমনই হোক, পরে হেঁটে দেখুন আরামদায়ক কি না। জুতা কেনার জন্য কমপক্ষে দেড় হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বাজেট রাখা উচিত।