Skip to content

প্রতি ৪১ শিশুর জন্মে একটি মৃত সন্তান প্রসব বাংলাদেশে

প্রতি ৪১ শিশুর জন্মে একটি মৃত সন্তান প্রসব বাংলাদেশে

বছরে ৬৩ হাজারের বেশি মৃত শিশু প্রসবের ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে । অর্থাৎ প্রতি ৪১টি শিশুজন্মের ক্ষেত্রে একটি মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশনের (ইউএন আইজিএমই) দুটি প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, মা ও নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে অগ্রগতি অর্জিত হলেও দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মৃত সন্তান প্রসবের সর্বোচ্চ হার রেকর্ড করে চলেছে, যা রোধে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।

ইউএন আইজিএমই চাইল্ড মরটালিটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে এক লাখের বেশি শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। এসব মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হয়েছে শিশুর বয়স ২৮ দিন হওয়ার মধ্যেই। মৃত শিশু প্রসবের ওপর তৈরি করা দ্বিতীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৬৩ হাজারের বেশি মৃত শিশু প্রসবের ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ প্রতি ৪১টি শিশু জন্মের ক্ষেত্রে একটি মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটছে। মৃত সন্তান প্রসবের এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সম্পর্কিত লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৮ হাজার নবজাতককে বাঁচাতে হবে, যা মাতৃ ও নবজাতকের উন্নত যত্নের জরুরি প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন বলেন, ‘প্রতিরোধযোগ্য জটিলতা যেমন অপরিণত জন্ম, সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা—সেপসিস ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের মতো জটিলতায় বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখেরও বেশি নবজাতক মারা যায়, যা তাদের বেঁচে থাকা ও বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লাখো শিশু ও মাকে বাঁচাতে পারি যদি আমরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে আরও বিনিয়োগ করি এবং সব পর্যায়ে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের, বিশেষ করে ধাত্রী মায়েদের সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাদের সঠিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারি, যাতে প্রতিটি নবজাতক যেন একটি নিরাপদ হাতে জন্মগ্রহণ করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিসেফ মাতৃ ও শিশুর মৃত্যু রোধে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশিদ মোহামেদ বলেন, ‘মৃত শিশুর জন্ম ও প্রতিরোধযোগ্য শিশুমৃত্যু বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জন্য একটি হৃদয়বিদারক বাস্তবতা হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ বিগত দশকগুলোতে মাতৃ স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারপরেও মানসম্মত ও সময়োচিত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। এই প্রবণতা বদলে দেওয়া এবং মর্মান্তিক ক্ষতি বন্ধে আমাদের অবশ্যই এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। গর্ভকালীন ও সন্তান প্রসবকালীন সেবা বিষয়ে ডব্লিউএইচওর পরামর্শ, ডব্লিউএইচওর লেবার কেয়ার গাইড এবং গ্লোবাল স্ট্রাটেজি ফর উইমেনস, চিলড্রেনস অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্টস হেলথে সরকার ও অংশীদারদের জন্য এ বিষয়ে স্পষ্ট এবং তথ্য-প্রমাণভিত্তিক করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।’

ডা. আহমেদ জামশিদ মোহামেদ আরও জানান, ‘২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনের জন্য আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি আছে। তাই মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা উন্নততর করতে আমাদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। ইউনিসেফের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ডব্লিউএইচও প্রতিরোধযোগ্য শিশু মৃত্যু ও মৃত শিশুর জন্মের অবসানের লক্ষ্যে অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। সরকারের জোরালো অঙ্গীকার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যব্যবস্থায় টেকসই বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে আমরা এই বেদনাদায়ক ক্ষতি প্রতিরোধ এবং প্রতিটি শিশুর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি’।

ইউনিসেফের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের উচ্চহারের পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন: ঘরে শিশুর জন্ম (৩০ শতাংশ), আকারে ছোট ও অসুস্থ নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা এবং  দক্ষ সেবাদাতা বা ধাত্রীর ঘাটতি। এছাড়া মা ও নবজাতকের অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে—উপজেলা পর্যায়ে ২৪/৭ মানসম্পন্ন সেবার অভাব, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে প্রসবের পর অপর্যাপ্ত সেবা এবং অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি খাত, যার ফলে এসফেকশিয়া (জন্মকালীন শ্বাসরুদ্ধতা), অপরিণত বয়স এবং সংক্রমণজনিত প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটে। এসব কারণে অপরিণত শিশুর জন্ম ও সংক্রমণের মতো প্রতিরোধযোগ্য জটিলতাতেও শিশুমৃত্যু ঘটছে।

একইসঙ্গে মানসম্মত গর্ভকালীন ও সন্তান প্রসবকালীন সেবার ঘাটতি এবং গর্ভধারণকালে অন্যান্য অসুস্থতাজনিত পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণে বাংলাদেশে উচ্চহারে মৃত শিশুর জন্ম হচ্ছে, যা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায়। তহবিল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সম্পদের ঘাটতি এসব সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং তা শিশু মৃত্যু কমিয়ে আনার অগ্রগতিকে ম্লান করে দিচ্ছে।