গর্ভাবস্থা এবং প্রসবোত্তর সময়কালে নারীদের করনীয়
গর্ভাবস্থা এবং প্রসবোত্তর সময়কালে নারীদের জন্য শারিরিক, মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকে বেশ কিছু আপত্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এসময়ে বিভিন্ন ঝুঁকির ফলে মা ও শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাবে এসব ঝুঁকি মারাত্মক হতে পারে।এমনকি অসচেতনতার ফলে অকাল প্রসব এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে মা ও শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। চলুন জেনে নিই, কিভাবে গর্ভাবস্থা এবং প্রসবোত্তর সময়কালে সচেতন থাকা যায়ঃ
এসময়ে যদি ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসজনিত রোগ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।
গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপে লবণ কম খেতে হবে(বিশেষ করে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন: চিপস, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা)। পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (কলা, কমলা, আলু)খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করা।ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি) কম খেতে হবে।• নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)। অতিরিক্ত মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, হাত-পা ফুলে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া।গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে চিনি, মিষ্টি ও প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা।কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করা (যেমন: লাল চাল, ব্রাউন ব্রেড, ওটস)।প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (ডাল, মাছ, মুরগি, ডিম) বেশি খাওয়া।ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার (শাকসবজি, ফলমূল) বেশি খাওয়া।অল্প পরিমাণে বারবার খাবার খাওয়া (একবারে বেশি না খেয়ে দিনে ৫-৬ বার ছোট ছোট মিল)।• রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত চেক করা।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ করা।রক্তস্বল্পতার ফলে মা ক্লান্তিবোধ করতে পারেন, শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সমস্যা,ত্বক ফ্যাকাশে হয়। সেক্ষেত্রে • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।শাকসবজি, বিনস, ডিম, গাজর এবং বাদাম খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করা।অকাল প্রসবজনিত সমস্যাগুলো এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। ভারী জিনিস তোলা বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে।ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে কারন এটি গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর এবং অকাল প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ায়।
রোগজনিত কারন ছাড়াও মা হওয়ার উদ্বেগ, হরমোনজনিত মুড পরিবর্তন,প্রসবের পর ক্লান্তি, সিজারিয়ানের ক্ষতজনিত ব্যথা, দুধ কম আসা, স্তনপানে ব্যাথাসহ গুরুতর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

•প্রসবোত্তর সময়কালে অনেকবেশি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে যার ফলে শরীরের রক্তস্বল্পতা ছাড়াও মানসিক বিষণ্ণতা থেকে তৈরি হতে পারে শিশু ও নিজের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি, মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি,চরম ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা।গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ে পরিবারের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের অনুভূতি শেয়ার করতে হবে ।ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটানো, অন্য মায়েদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা আলোচনা করতে হবে।অস্থিরতাজনিত সমস্যা থাকলে কাউন্সেলিং নেওয়া যেতে পারে। এসময় ইতিবাচক চিন্তা করা, নিজের জন্য সময় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে সাস্থ্যের উপর। মনের প্রশান্তি বজায় রাখার জন্য মেডিটেশন, বই পড়া, মিউজিক শোনা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমাতে পারেন।
প্রসবোত্তর সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণত, প্রথম প্রসবের ৪-৬ সপ্তাহ পর প্রথম চেকআপ করা হয়। তবে, শারীরিক ও মানসিক জটিলতা অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
গর্ভাবস্থা ও প্রসবোত্তর সময় অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তাই ধৈর্য ধরে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, নিজের পছন্দের কাজগুলো, ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এসময়ে ঘুম, খাবার ও দৈনন্দিন কাজের জন্য একটি সময়সূচি মেনে চলতে পারলে মানসিক চাপ কমবে।সব সময় শিশুর পেছনে না ছুটে মাঝে মাঝে নিজের জন্যও সময় রাখতে হবে।ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে অর্থাৎ সংসার, চাকরি বা পড়াশোনার দিকে ফোকাস করে স্বাভাবিক জীবনে আসতে হবে।
ধৈর্য ও ইতিবাচক মনোভাব রাখা খুবই জরুরি এমন সময়ে।শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে ধৈর্য ধরে ব্যাল্যান্স করতে হবে। সামঞ্জস্যতা ও মানসিক প্রস্তুতি থাকলে মা ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন।