বর্ষায় ফিমেল হাইজিন
প্রাকৃতিকভাবে নারীদের শরীর সংবেদনশীল তাই সবসময় তাদের চাই বাড়তি যত্ন কিন্তু বর্ষার ঋতুতে সঠিকভাবে হাইজেন মেইনটেইন না করলে দেখা দিতে পারে অনেক ধরনের রোগবালাই। তাই বর্ষার উপভোগ করার পাশাপাশি মেয়েরা কিভাবে নিজেদের ফিমেল হাইজেন মেইনটেইন করতে পারে তা নিয়ে কথা হয় গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে যে কোন রোগের প্রবণতা খুব বেশি বেড়ে যায়। আর মেয়েদের দেখা দেয় কিছু সমস্যা যেমন যোনিতে সংক্রমণ তার মধ্যে অন্যতম।
বৃষ্টির সময় আবহাওয়ার তাপমাত্রা ওঠানামা করে এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার সহজেই বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মূত্রনালীর সংক্রমণ দেখা দিতে পারে৷ আবহাওয়া আর্দ্র থাকার ফলে শরীরের পানি পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে যোনির পিএইচ লেভেলও কমে যায়, আর যোনির পিএইচ লেভেল কমার ফলে ছত্রাক বৃদ্ধি পায়৷ এছাড়া ঘামের কারণে অন্তর্বাস ভিজে গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়, তার মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে নানা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ৷ এই সময় গর্ভবতী মায়েদের থাকতে হবে বিশেষ সাবধান। কারণ এই সময়টা তাদের কোনো ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ হলে তা সন্তান ও মায়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷
১। পরিয়ডের সময় পরিষ্কার থাকুন : সম্ভব হলে বর্ষায় প্যাডের পরিবর্তে মেনস্টুয়াল কাপ ব্যবহার করুন তাতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধ করা যাবে। আর প্যাড ব্যবহার করলে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরপর প্যাড বদলে ফেলুন। অনেকে দুইটা প্যাড একসাথে পরে যা উচিত নয় এতে র্যা শ হতে পারে। পরিয়ডের সময় জরায়ুতে সংক্রমণ হবার ঝুঁকি থাকে তাই যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন থাকুন ও প্রতিদিন পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করুন
২। যোনি পথের যত্ন : সংবেদনশীল স্থান হওয়ার কারণে যোনি পথের যত্ন সবসময় নেয়া উচিত। যোনি পথের আশেপাশের স্থান যাতে শুকনো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে না হলে দাদের মতো নানা ধরনের অসুখ হতে পারে৷ যোনিতে কখনো সুগন্ধি পণ্য ব্যবহার করা উচিত না৷ যোনি থেকে সাদা পানির মতো বের হলে ভয়ের কিছু নেই এটি ভেতরে জমে থাকা জীবাণু বের করতে সাহায্য করে। কিন্তু সাদা না হয়ে যদি অন্য রঙের পানি বের হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। যোনি পথের যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখে লজ্জা না পেয়ে প্রকাশ করতে হবে৷
৩। সঠিক পোশাক ও অন্তর্বাস : ভুল অন্তর্বাস বেছে নেয়ার ফলে নারীদের নানা ধরনের রোগ হতে পারে। সবসময় ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরিধান করা উচিত৷ কারণ খুব টাইট ও শক্ত পোশাক শরীরে আর্দ্রতা বাড়ায় ও এরফলে অতিরিক্ত ঘাম হয়।
আর পোশাকের ক্ষেত্রে সুতির কাপড় বেছে নেয়া উচিত এতে সহজে শরীরে বাতাস প্রবেশ করতে পারবে৷ ভেজা কাপড় পরিধান করা যাবে না কারণ এটি সংক্রমণ ঘটায়। পোশাক ও অন্তর্বাস দুটিই নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থেকে এসে ঘাম শুকিয়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷ অন্তর্বাস ধোয়ার আগে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। অনেকে অন্তর্বাস গরম পানি দিয়ে ধুয়ে থাকে, আসলে এটি ঠান্ডা পানি দিয়ে ধোয়া উচিত। কারণ কাপড়ের জন্য গরম পানি ভালো হয় না।
৪। ডায়েট : বর্ষাকালে বাজারে নানারকম ভিটামিন সি যুক্ত ফল পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় তাই রোজ ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে কারণ ভিটামিন সি যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে৷ তাছাড়া এই সময়ে জ্বর সর্দি ঠান্ডা কাশি প্রবণতা বেড়ে যায়, ভিটামিন সি ঠান্ডা কাশির জন্যও বেশ উপকারী। এই মৌসুমে যতটা সম্ভব বাইরে কিংবা রাস্তার খাবার এড়িয়ে যেতে হবে কারণ এতে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ হতে পারে৷ তাই ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৫। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে : শরীরের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে দেহের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করতে হবে।
নারীরকে সবসময় হাইজেনিক থাকতে হবে তা না হলে যে-কোনো ছোট সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের নারীরা যৌন সংক্রান্ত সমস্যার কথা প্রকাশ করতে চায় না। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে পরবর্তী সময়ে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সময় থাকতে প্রতিটি নারীর নিজের হাইজেন মেইনটেইন করা উচিত ও যেকোনো সমস্যা খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।