Skip to content

২০২৫ সালের আগে পৃথিবীতে ফেরা হচ্ছে না নভোচারী সুনিতা ও উইলমোরের

২০২৫ সালের আগে পৃথিবীতে ফেরা হচ্ছে না নভোচারী সুনিতা ও উইলমোরের

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে মহাকাশে আটকা থাকা দুই মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি উইলমোরকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের একটি মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে নাসা। ৫ জুন তারা বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) গিয়েছিলেন। তাদের মিশন ছিল মাত্র আট দিনের। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাদের মহাকাশে প্রায় আট মাস অবস্থান করতে হচ্ছে।

বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটি নাসার সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। কিন্তু মিশনের শুরুর দিকেই এতে একাধিক সমস্যা ধরা পড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রুটি হলো হিলিয়াম গ্যাস ফুটো হয়ে ছড়িয়ে পড়া এবং ইঞ্জিনের কার্যকারিতা বিঘ্নিত হওয়া। এ ধরনের ত্রুটির কারণে স্টারলাইনারটি নভোচারীদের নিয়ে পৃথিবীতে ফেরার উপযোগী নয়। তাই এটি মানববিহীন অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

নাসা মহাকাশ গবেষণায় বাণিজ্যিকভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে—বোয়িং এবং ইলন মাস্কের স্পেসএক্স। এর মধ্যে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তির মূল্য ৪২০ কোটি ডলার এবং স্পেসএক্সের সঙ্গে ২৬০ কোটি ডলার। স্পেসএক্স ইতোমধ্যেই নয়টি সফল মানববাহী মিশন পরিচালনা করেছে, যেখানে বোয়িংয়ের স্টারলাইনারের এটি প্রথম মিশন ছিল। তবে এই ত্রুটির কারণে বোয়িংয়ের প্রথম প্রচেষ্টাটি সমস্যায় পড়েছে।

বোয়িং এবং নাসার প্রকৌশলীরা গত কয়েক মাস ধরে স্টারলাইনারের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। তারা মহাকাশে এবং পৃথিবীতে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাসার প্রশাসক বিল নেলসন জানিয়েছেন, মহাকাশ গবেষণায় ঝুঁকি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিশেষ করে পরীক্ষামূলক মিশনে আরও বেশি ঝুঁকি থাকে। তবে তারা নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পরিকল্পনা
নভোচারীদের ফেরত আনা
যেহেতু স্টারলাইনার নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য উপযুক্ত নয়। নাসা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের সাহায্য নিচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্পেসএক্স সেপ্টেম্বরের শেষে একটি নতুন মহাকাশযান পাঠাবে, যা আইএসএস-এ দুজন নতুন নভোচারী নিয়ে যাবে। এই মহাকাশযানটি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুনিতা এবং উইলমোরকে নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

সুনিতা উইলিয়ামস (৫৮) এবং ব্যারি উইলমোর (৬১) মহাকাশ ভ্রমণে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দুইজন নভোচারী। তারা এর আগেও দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন এবং সকল ধরনের ঝুঁকির সঙ্গে তারা পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে তারা শান্ত থেকে নাসার পরিকল্পনায় পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।

আইএসএস-এ অতিরিক্ত এই সময়টিতে তারা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং মহাকাশ স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবেন। তাদের একাধিকবার মহাকাশে হাঁটার (স্পেসওয়াক) সম্ভাবনাও রয়েছে। এর মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

এই ঘটনাটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি মহাকাশযান প্রকল্পগুলোর জন্য একটি শিক্ষা। এটি বোঝায়, প্রযুক্তিগত ত্রুটির ঝুঁকি কেবল পরীক্ষামূলক মিশনেই নয়, বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সমানভাবে হতে পারে। নাসা এবং বোয়িং এখন আরও উন্নত মানের প্রযুক্তি এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে।

সুনিতা এবং উইলমোরের এই অভিজ্ঞতা মহাকাশ গবেষণায় নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ভবিষ্যৎ মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেবে। এছাড়া মহাকাশযানে সমস্যার প্রকৃতি এবং সমাধানের প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মহাকাশ গবেষণায় ঝুঁকির সঙ্গে মানিয়ে চলাই বিজ্ঞানীদের কাজ। সুনিতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি উইলমোরের এই অভিজ্ঞতা কেবল তাদের জন্য নয়, গোটা মহাকাশ গবেষণা সম্প্রদায়ের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা। তাদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফেরানোর মাধ্যমে নাসা ও স্পেসএক্স আবারও প্রমাণ করবে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

সূত্র : বিবিসি