ক্লিনিক থেকে ফ্যাশন ব্র্যান্ডে রূপান্তরের নেপথ্যে বাসমা হামিদ
আগুনে দগ্ধ হওয়া কিংবা দুর্ঘটনায় ভয়ংকর আঘাত পাওয়ার যন্ত্রণা তো আছেই। একইসাথে আছে সারাজীবন সেই ক্ষত বহন করে নিয়ে চলার ভোগান্তি। বিশেষত সেই ক্ষত যদি নিজের মুখে হয়? অনেক সময় এসকল ক্ষত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় থাকেনা।
অনেককে শুধু সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। কিন্তু সেই সান্ত্বনাকেই যেন পাশ কাটিয়ে বাসমা হামিদ গড়ে তুললেন এক অভিনব চিকিৎসাপদ্ধতি। মূলত দুর্ঘটনা থেকে পাওয়া ক্ষত লুকিয়ে ফেলার জন্যে উদ্ভাবিত ট্যাটু পদ্ধতি সমগ্র বিশ্বেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই মাইক্রো-পিগমেন্টেশন স্পেশালিস্ট সামান্য একটি ক্লিনিককে দ্রুতই একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডে পরিণত করে তুলেছেন।
নিজ উদ্যোগে টরোন্টোতে গড়ে তুলেছেন বাসমা হামিদ স্কার ক্যামোফ্লাজ ক্লিনিক। মেডিক্যাল এস্থেটিক্স নিয়ে নিজের গবেষণা থেকেই গড়ে তুলেছেন এই অভিনব ক্লিনিক। কাজ করেছেন জরডিন উড, আনাসতাসিয়া কারানিকোলাও ছাড়াও আরো অনেক তারকার সাথে। কিন্তু এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পেছনে আছে মন খারাপ করা গল্পের। আর মন খারাপকে অবলম্বন করে নতুন কিছু করা থেকে আরো হাজারো মন খারাপকে জয়ের অনুপ্রেরণা তৈরি করলেন বাসমা হামিদ।
মাত্র দুই বছর বয়সে রান্নাঘরে এক দুর্ঘটনার শিকার হন বাসমা। সেখান থেকেই মুখের উপর ভয়ংকর এক লাল ক্ষত দেখা দেয়। উন্নত চিকিৎসার খোঁজে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে লাভ হয়নি। অনেক টাকা খরচ করে কিংবা অনেক বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হলোনা। শেষ মেষ এক ডাক্তার পরামর্শ দিলেন এই অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে।
আর কোনো আশা নেই। তাই বাসমাকে অন্য পথ খুঁজতে হলো। নিজেকে যাতে বীভৎস না দেখায় তাই তিনি মুখে মেকআপ দিতে শুরু করলেন। মেকআপ দিয়ে ক্ষত লুকিয়ে ফেললে স্বাভাবিক চেহারা ফিরে আসে।
শুরুটা প্রয়োজন থেকে। পরবর্তীতে তা হয়ে দাঁড়ায় প্যাশন। আন্ডারটোন, রঙ, উপাদান আর এদের পেছনের রসায়ন নিয়ে তিনি ঘাটাঘাটি শুরু করেন। কিন্তু মেকআপের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিলো। ত্বকের ক্ষতে কোনো ক্ষতি করবে না এমন মেকআপ খুঁজে পাওয়া ছিলো কঠিন। শুধু স্বাভাবিকদের জন্যেই মেকআপ? এখান থেকেই স্বপ্নের শুরু।
নিজের ক্ষতের বিবর্ণ ভাব কমাতে অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি৷ লেজার সার্জারি থেকে শুরু করে ক্রিম- কিছুই বাদ যায়নি। কোনোকিছুতেই কাজ হয়নি৷ সে সময়ে পারমানেন্ট মেকআপের জনপ্রিয়তা বাড়ছিলো। এখান থেকেই ভাবলেন, যদি ত্বকে রঙ দিয়ে মেকআপের আদল দেয়া যায় তাহলে ক্ষতে কেন ত্বকের রঙ করা যাবেনা?
এই ভাবনা তাকে শান্তি দিয়েছিলো। আশার আলো দেখাচ্ছিলো। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ডাক্তারই জানালেন ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু কোনোমতেই রঙ ধরে রাখতে পারবে না।
নিজের উপর বিশ্বাস ছাড়া তখন আর কিছুই করার নেই। বাসমা তাই একদিন রাতে নিজের ত্বকের রঙের সাথে মিলিয়ে একটি পারমানেন্ট মেকআপের স্যাম্পল তৈরি করলেন। প্রথমবার ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পেলেন। কিন্তু সম্পূর্ণ সফলতা আসেনি। পদ্ধতিটিকে আরো নিখুঁত করতে হবে। যতই পরীক্ষা করলেন, আরো ভালো ফলাফল পেতে শুরু করেন। একসময় নিজের উপর এতটা আত্মবিশ্বাস চলে এলো যে নিজের উদ্ভাবনকে সফল বলার মতো সাহস পেলেন। আর সেখান থেকেই এক ক্লিনিক খোলার সাহস সঞ্চার করলেন।
মেডিকেল এস্থেটিক নিয়ে পড়াশোনা করায় এবং সারাজীবন ত্বকের বিষয়ে জানতে থাকায় বাসমার অভিজ্ঞতার ঝুলিও বড়। এবার তিন বছরের পরিশ্রমে গড়লেন বাসমা ফাউন্ডেশন। নিজের বানানো ফর্মুলাটিকে বানিয়েছেন আলট্রা-হাইড্রেটিং এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।
তার আবিষ্কৃত এই ফর্মুলা খুব দ্রুতই সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আর বর্তমানে ত্বকের ক্ষত ক্যামোফ্লাজ করতে এই ক্লিনিক এক জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। একদম শুরু থেকেই অসংখ্য আবেগ আর হাসিমুখকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছে এই ব্র্যান্ড। শুধু ব্যবসাই নয়, অধ্যবসায়, মেধা আর কঠোর পরিশ্রমের সাথে ভালোবাসার মিশেল সম্ভবত নারীর পক্ষেই সম্ভব।
অনন্যা/এআই