রমজানেও সুস্থ থাকুক নারী
নারীর অনেক রূপ। কখনো কন্যা, কখনো মা, কখনো বা স্ত্রী রূপে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সমাজ তো দূরে থাক পরিবারেরই বেশির ভাগ নারী খুব অসুস্থ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ একজন সুস্থ নারীই পারেন একটি সুস্থ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক হতে।
শুরু হয়েছে রমজান মাস। আর মা কিংবা স্ত্রী যে কোন নারীকে সারাবছরের থেকে অনেক বেশি ধকল সইতে হয় এই মাসটিতে। কাজের সাথে যুক্ত হয় রোজা থাকার বিষয়টি। কিন্তু কজন আছেনা যারা মনে রাখেন, আমি নারী বলে কেবল মুখ বুজে কাজ করাটাই সব কিছু নয়। সুস্থ থাকাটাও জরুরি।
আর রমজানে তো অবশ্যই শারীরিক ও মানসিক দুইভাবে নারীকে সুস্থ থাকতে হবে। তাই শারীরিক সুস্থতার জন্য রমজানে প্রতিটি নারীর উচিত তার নিজের সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, রুটিন অনুসারে দৈনন্দিন কাজের প্রতি যত্ন শীল। থাকা।
রোজায় নারীদের সন্থ থাকতে সচেতন করেছেন মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন্স এন্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার রোখসানা খানম। তিনি বলেন আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারীদের রোজায় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। বিশেষ করে যেসব নারীরা সন্তান ধারণ করেও রোজা থাকছেন এবং ৬০ বছর ও তার থেকে বেশি বয়সের এমন বয়স্ক নারী আছেন যাদের ক্ষেত্রে রোজার ফলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে তাদের মেরুদণ্ড বা নিতম্বের হাড়ের ক্ষয় হয়। তাই এসময় ক্যালসিয়াম রয়েছে এমন খাবার খাওয়া জরুরি।
এছাড়া তিনি আরও বলেন আমাদের দেশে বেশির ভাগ নারীদের মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে রক্তস্বল্পতার সমস্যা। আর রমজানে সঠিক খাদ্যঘাটতির কারনে এই সমস্যা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রমজানে খাদ্যতালিকায় আয়রনজনিত খাবার গুলো বেশি খেতে হবে। মনে রাখতে হবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ না খেয়েও রক্তস্বল্পতা দূর করা যায়।
এদিকে রমজানে নারীর সুস্থতা নিয়ে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার খাদিজা বলেছেন, নারীর স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে নিজেদেরই। রমজানের সময় হতে হবে বেশি সচেতন, রোজার আগেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগিদের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি। নারীদের সারাবছর তো বটেই রমজান মাসে অবশ্যই শরীরের প্রতি বেশি যত্নশীল থাকতে হবে। বিশেষ করে তিনি রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে তবেই রোজা থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
এছাড়া তিনি ৪৫ বছরের বেশি বয়সের নারীদের ডায়াবেটিসের পরীক্ষার সুপারিশ করেছেন। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস আছে অথবা ওজন বেশি-এমন নারীরা কম বয়সী হলেও রোজার সময় পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্কয়ার হসপিটালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফারহানা দেওয়ান এর মতে রমজানে খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম এবং রান্না ঘরের গরমে কাজের চাপ, রাতের ঘুমের হেরফেরের কারনে অনেক নারীদের মধ্যে রক্তচাপ উঠা নামার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। যার ফলে তাদের স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই রোজায় ২০ বছরের বেশি বয়সের নারীদের অবশ্যই রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত।
ইফতার এবং সেহরির জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকার প্রতি প্রত্যেকে নারীকেই বিশেষ নজরদারির কথা সবসময়ই বলে থাকেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে রমজানে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া না খেয়ে স্বল্প পরিমাণে ভাত সবজি, কলা খেজুর, দই চিড়া খেলেই সুস্থ থাকা যায়।
এছাড়া রোজায় কাজের ফাঁকে হলেও সময় নিয়ে কিছুক্ষণ হালকা ব্যায়াম অথবা ইয়োগা করার পরামর্শও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এতে নারীর শরীর ও মন দুটোই থাকবে চাঙ্গা।
মনে রাখতে হবে সারাদিন রোজা থেকে অফিস, সংসার সামালাতে গিয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজের এবং পরিবারের উভয়ের জন্যই ক্ষতি। বাড়ির নারীটি সুস্থ ভাবে চনমনে হয়ে ঘুরে বেড়ালেই তো পরিবারের অন্য সবাই সুস্থ এবং হাসিখুশি থাকতে পারবে। আর তাহলেই রোজার পরে ঈদটিও হবে আনন্দের