জনপ্রিয় মুখ মেহজাবীনের ‘প্রিয় মালতী’
ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ মেহজাবীন চৌধুরী। নাটক ও ওয়েব ফিল্মে তাঁর অভিনয়ের যাদুতে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন বহুবার। এবার সেই যাদু নিয়ে হাজির হয়েছেন বড় পর্দায়। ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক। মুক্তির পরপরই সিনেমাটি দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। এটি শুধু একটি সিনেমা নয় বরং বাস্তব জীবনের এক নিখুঁত প্রতিফলন।
‘প্রিয় মালতী’ সিনেমার গল্প আমাদের চেনা জীবনের এক টুকরো ছবি। পলাশ আর মালতীর সংসার খুবই সাধারণ। পলাশ একটি দোকানের কর্মচারী আর অন্তঃসত্ত্বা মালতী সংসার সাজানোর স্বপ্নে বিভোর। তাদের এই ছোট্ট, সুখী সংসার একদিন আচমকা ভেঙে পড়ে।পলাশের কর্মস্থলে ভয়াবহ আগুন লাগে। মালতী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এমন কিছু দেখে যা মুহূর্তেই তার জীবনকে ওলট–পালট করে দেয়। এরপর শুরু হয় মালতীর জীবনের এক কঠিন লড়াই। এই লড়াই কি সে শেষ পর্যন্ত জিততে পারে নাকি হার মেনে নেয়?
মালতীর ভূমিকায় মেহজাবীন যেন নিজেকেই ছাপিয়ে গেছেন। নাটক বা সিরিজে তিনি রোমান্টিক চরিত্রে দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু ‘প্রিয় মালতী’তে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর অসহায়ত্ব, স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট এবং সমাজের রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে সংগ্রাম সবকিছুই তিনি এতটা নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন যে দর্শকও মালতীর যন্ত্রণার অংশ হয়ে গিয়েছে। তাঁর চোখের জল, অসহায়ত্ব, এবং মনের দৃঢ়তা এক গভীর ছাপ রেখে যায় দর্শকের মনে।
মেহজাবীনের বিপরীতে পলাশ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিজভী রিজু। চরিত্রটি ছোট হলেও তিনি নিজের উপস্থিতি দিয়ে তা স্মরণীয় করে তুলেছেন। বাবার ভূমিকায় আজাদ আবুল কালামের অভিনয় ছিল অনবদ্য। একদিকে তাঁর চরিত্রের লোভ, অন্যদিকে অসহায়তা দুটোই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নেতিবাচক চরিত্রে আনিসুল হক বরুণ ব্যাপারী হিসেবে ছিলেন দুর্দান্ত। শাহজাহান সম্রাট ও নাদের চৌধুরীও তাদের চরিত্রে যথার্থ।
সিনেমাটির পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত এর আগে ওটিটির জনপ্রিয় সিরিজ ‘গুটি’ ও ‘বলি’ নির্মাণ করে বাস্তবধর্মী গল্পের প্রতি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। ‘প্রিয় মালতী’ তার প্রথম সিনেমা হলেও এই সিনেমার পরিচালনা ছিল যত্নশীল ও দক্ষ। পুরান ঢাকার সদরঘাট, শাঁখারীবাজার, গুলিস্তানসহ বাস্তব লোকেশনে শুটিং সিনেমাটিকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। বরকত হোসেন পলাশের চিত্রগ্রহণে ঢাকা শহর যেন সিনেমার আরেকটি চরিত্র হয়ে উঠেছে। রুসলান রহমানের আবহসংগীত মালতীর জীবনের উত্থান-পতনকে আরও গভীরভাবে অনুভব করিয়েছে দর্শককে।
‘প্রিয় মালতী’ অ্যাকশন, কমেডি বা থ্রিলারের বাইরে গিয়ে দর্শকদের জন্য একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা। এটি একদিকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার গল্প বলে। আবার অন্যদিকে প্রশ্ন তোলে সমাজ ও মানুষের দায়বদ্ধতা নিয়ে। জোর করে কোনো বার্তা দেওয়ার চেষ্টা না করেও এটি দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।এই সিনেমা দেখার পর মনে হবে এটি তো আমাদেরই গল্প। একদম আমাদের পাশের জীবনের গল্প যেখানে আমরা নিজেরাই কোনো না কোনো চরিত্র।
‘প্রিয় মালতী’ শুধু একটি সিনেমা নয় এটি বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। মেহজাবীনের অসাধারণ অভিনয় এবং শঙ্খ দাশগুপ্তর যত্নশীল নির্মাণ এটিকে ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তাই বাংলা সিনেমায় শক্তিশালী নারী চরিত্রের তালিকায় মালতীর নাম যে জায়গা করে নেবে তা নিশ্চিত।