নারী নির্যাতন বনাম প্রেমের ফাঁদ
কালের পরিক্রমায় জীবনযাত্রারও পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ হয়ে পড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর। ফলে দেখা দিয়েছে নানামাত্রিক জটিলতা। আর এই জটিলতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারী-নিপীড়নের নানা কৌশল। তবে নারী-নিপীড়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্যবহার করে প্রেমকে। যদিও প্রেম বলা হচ্ছে কিন্তু সেখানে হৃদয়ের কোনো সংযোগই থাকে না। বরং প্রেমের ফাঁদকে কাজে লাগিয়ে নারীদের নিপীড়ন এবং তাদের সঙ্গে প্রতরণাই মুখ্য হয়ে ওঠে।
ইদানীং একটি বিষয় খুবই ভয়াবহরূপে বৃদ্ধি পেয়েছে; নারী-নিপীড়ন তবে এই নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ফাঁদ। যে ফাঁদে পড়ে অনেক নারীই তার সর্বস্ব হারায়। তবে এক্ষেত্রে যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িত তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেই মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। অনেকক্ষেত্রে আবার ফোন কলের মাধ্যমেও প্রথমে পরিচয়পর্ব ঘটে। এক্ষেত্রে দেখা যায় এ ধরনের অসাধু ব্যক্তিরা মিথ্যা বা ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে এবং এর মাধ্যমেই প্রাথমিক পর্যায়ে রিকোয়েস্ট পাঠায়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ভাবের আদান-প্রদান করতে করতে নারীর দুর্বলতাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। আর এই দুর্বল পয়েন্টটাই হয়ে ওঠে অসাধু ব্যক্তির প্রধান হাতিয়ার।
কেউ যদি পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে বা হতাশা-বিষণ্ণতায় ভোগে বা যেকোনো সাধারণ বিষয়কে ইস্যু করে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। আত্মিক সম্পর্কের জের ধরে একধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলে। যেহেতু নারীকে নিজের বশে আনাটাই সব তাই চক্রান্তকারী এই ব্যক্তিরা নারীর সব চাহিদাও মিটাতে শুরু করে। কারণ বিশ্বাস বা আস্থা অর্জন না করলে নারীর পুরো ক্ষতিটা অসাধু ব্যক্তি দ্বারা সম্ভব নয়। নারীকে তাই আগে একশ্রেণী দখল করার চেষ্টা করে মানসিকভাবে। যখন ফাঁদে পুরোপুরি করায়ত্ত করতে পারে তখন টাকা হাতিয়ে, দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে নানাভাবে বশে আনে। কেউ কেউ টাকা পর্যন্ত ঠিক রাখে, যেন ধরা না পড়ে। আবার কেউ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক করে। তারপর লাপাত্তা হয়ে পড়ে। এজন্য ইদানীং প্রায়ই দেখা যায় প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন! কিন্তু নারীরা সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে যাচাই-বাছাই না করেই মিষ্টি কথায় ভুলে থাকে আর ফলটাও হাতেনাতেই পায়। প্রেমিক নামধারী প্রতারক অনেকক্ষেত্রে মোটা অঙ্কে টাকা আবার কেউ টাকাসহ নারীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়৷
বর্তমান যুগে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভালো-মন্দ উভয়দিক আছে। এটা ব্যক্তি কিভাবে ব্যবহার করবেন তার ওপর নির্ভর করে কিন্তু চোর না শোনে ধর্মের বাণী! তাই অসাধু ব্যক্তি নিজ স্বার্থ হাসিলে অন্যকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। চক্রান্তকারী এধরনের লোকেরা প্রথমত নারীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাকে বিপদে ফেলে। আর ডিজিটাল ডিভাইসের তো সুবিধা যেমন অসুবিধা সৃষ্টি করাও ততটাই সহজ। এই চক্র নারীর আবেগের সুযোগে তার ব্যক্তিগত ছবিও সংগ্রহ করার চেষ্টা করে নানাভাবে। পরর্বতী সময়ে সেটার জের ধরে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে। আবেগবশত নারীরা যে ভুল করে সেটার মাশুল হিসেবে নীরবে সব সহ্য করে। এই থেকেই অপরাধীরা আরও শক্তি পায় আবারও আরেক নারীকে ফাঁদে ফেলার। বর্তমানে এ ধরনের বহু চক্রের খবর গণমাধ্যমে আসে।
বর্তমানে আরও একটি কৌশল চক্রগুলো ব্যবহার করছেন পুরুষই নারী কণ্ঠ করে পুরুষকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশি ও প্রবাসী নারী-পুরুষ উভয়কেই টার্গেট করছে চক্রের সদস্যরা।
নারী ও পুরুষের হৃদয়বৃত্তিক কোমল সম্পর্ক একশ্রেণীর কাছে হয়ে উঠেছে প্রতারণার হাতিয়ার। নারীদের ফাঁদে ফেলা সহজ বিধায় কিছু প্রতারক প্রেমের জাল বিস্তার করে প্রতারণা করে চলেছে। সময় এসেছে সচেতনতার। অপরিচিত ফোন নম্বরে বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হৃদয়বৃত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকা। যদি কোনোভাবে প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার বাসনা তৈরি হয়, তবে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই এর চেষ্টা করা। পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাজের জায়গা সর্বত্রই লক্ষ করা। নারীরা বর্তমানে অহরহ বিচার-বিবেচনা না করেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন এ থেকে বিরত থাকতে হবে সবাইকে। সর্বোচ্চ সতর্কতাই পারে এ ধরনের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই প্রত্যেক নারীকে নিজের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িয়ে না পড়েন।