হাসপাতালে এমার্জেন্সি বিভাগে সাহায্য করবে এআই
হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে নানা জরুরি কারণে রোগীর ভিড় দেখা যায়৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সব রোগীর দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব হয় না৷ এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া দ্রুত ও নিরাপদ করার উদ্যোগ চলছে৷
হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে শুক্রবার বিকালের পরিচিত দৃশ্য৷ ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ হলেই সেখানে রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে৷ ফলে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও বাড়তি চাপের মুখে পড়েন৷
এমারজেন্সি ডাক্তার হিসেবে টোবিয়াস স্ট্রাপাৎসাস এক গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছেন, যার আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত ও নিরাপদ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘বেশিরভাগ রোগীকেই অ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে নিয়ে আসা হয়৷ যেভাবেই রোগীরা আসেন না কেন, তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন কতটা জরুরি, যত দ্রুত সম্ভব সেটা নির্ণয় করাই আমাদের কাজ৷ অর্থাৎ কোন রোগী কত সময় ধরে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷”
অ্যাম্বুলেন্সে থাকতেই রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ মিশায়েল ব্যোকেলস বলেন, ‘‘যেমন রোগীর অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়৷ তারপর তার অতীতের রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়৷ মানুষটি সজ্ঞানে কথা বলছেন কিনা, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্য কেউ ফার্স্ট এড দিয়েছেন কিনা, তাও জানতে হয়৷”
এই সব তথ্য এখনই সরাসরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ এবার এআই সেই তথ্য মূল্যায়ন করবে৷ ফলে কোনো রোগীর কত দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত, সেই অনুমান করতে সহায়তা পাওয়া যাবে৷ টোবিয়াস স্ট্রাপাৎসাস জানালেন, ‘‘বাস্তবে সম্ভবত এই সিস্টেম অ্যাম্বুলেন্স থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে জানাবে, সে ক্ষেত্রে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ বা জরুরি সংকেত পাওয়া গেছে৷ তাই সেই রোগীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷”
গুরুতর রোগীর সিদ্ধান্ত নেবে এআই
এমারজেন্সি বিভাগে আসা রোগীদের অগ্রাধিকারের প্রশ্নে স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার আগে লক্ষণগুলি নথিভুক্ত করেন৷ রোগীর সমস্যা অনুযায়ী রং ধার্ষ করা হয়৷ লাল রংয়ের অর্থ, অবিলম্বে ডাক্তারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন৷ কমলার অর্থ দশ মিনিটের মধ্যে সেটা করতে হবে, হলুদের ক্ষেত্রে সেটা ৩০ মিনিট৷ এআই সেই মূল্যায়নের পাশাপাশি সম্ভবত কিছু অতিরিক্ত তথ্য দেবে৷ যেমন অ্যাম্বুলেন্সে যদি রোগীর কোনো নতুন লক্ষণ ধরা পড়ে৷ স্ট্রাপাৎসাস মনে করেন, ‘‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়াস হয়তো এক ভালো উদাহরণ৷ হৃদযন্ত্রের এই ক্ষণিকের সমস্যা হয়তো পরে আর হুবহু শনাক্ত করা সম্ভব নয়৷”
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হয়তো ভবিষ্যতে এমন জরুরি অবস্থার আরো ভালো মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে৷ তবে এর অর্থ এই নয়, যে সেই দায়িত্ব প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে৷ স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটালাইজেশনের বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাক্সিমিলিয়ান ভাইস এমনটা মনে করেন৷ তাঁর মতে, ‘‘কারণ এআই-এর ক্ষমতারও সীমা রয়েছে৷ আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলি বটে, কিন্তু আমার মতে বুদ্ধিমত্তা শব্দটি এ ক্ষেত্রে কিছুটা অতিরঞ্জিত৷ আমাদের কাছে শক্তিশালী কিছু যন্ত্র আছে, যা প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে পারে৷ তবে এখনো পর্যন্ত কার্যকারণ সম্পর্ক সম্পর্কে যন্ত্রের কোনো ধারণা নেই৷ তাছাড়া কোনো রকম সিদ্ধান্ত এবং অবশ্যই নৈতিকতার ধারেকাছে পৌঁছয় নি৷”
বর্তমান প্রকল্পেও পরিকল্পিত এআই প্রণালী স্বাস্থ্যকর্মীদের শুধু সহায়তা করবে৷ টোবিয়াস স্ট্রাপাৎসাস বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত বেডের ধারে স্বাস্থ্যকর্মী দাঁড়িয়ে থাকবে৷ তিনি যদি বলেন, রোগীর ক্ষেত্রে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও মনে খটকা রয়েছে, তখনও সেই রোগীকে লাল বা কমলা পর্যায়েই রাখা হবে৷”
ঠিক কোন তথ্যের ভিত্তিতে এআই সত্যি কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারে, বর্তমানে সে বিষয়ে দরকষাকষি চলছে৷ কয়েক বছর পরেই সেই প্রণালী বড় আকারে কাজে লাগানো যাবে৷
অনন্যা/এআই