হরিতকী: পোশাক যেন জীবন্ত ইতিহাস!
গ্রামের সহজ সরল মনকাড়া দৃশ্য, কিংবা মুঘল আমলের কোনো ঐতিহ্যের ছোঁয়া। হতে পারে আপনার কোনো প্রিয় সিনেমা বা সিরিজের দৃশ্য, কবিতার পঙ্ক্তি। এসব বিষয় আপনি দিব্যি গায়ে জড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিভাবে? পোশাকের মাধ্যমে।
পোশাকের মাধ্যমে যদি ঐতিহ্যকে প্রাচীন আমলের বিভিন্ন ইতিহাস আজকাল ফ্যাশন দুনিয়ায় বেশ বিখ্যাত। ফ্যাশন হাউজগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে নিত্যনতুন ফ্যাশন তৈরির। পোশাক পছন্দ করতেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় ক্রেতাদের। তবে এসব ক্ষেত্রে দেশের ফ্যাশন দুনিয়ায় বিশ্বাসযোগ্য নাম ‘হরিতকী’।
ট্র্যাডিশনাল, ক্ল্যাসিক, থিম বেসড বা যার সঙ্গে ইতিহাস সংস্কৃতি, শিল্প সম্পৃক্ত সে বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দেয় হরিতকী। বিখ্যাত পেইন্টিং, কবিতা, পটচিত্র, গান, নবাব, রাজা, বই, পোস্টার অনেক কিছু নিয়ে কাজ করেছে আর করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীর ইতিহাস কিংবা সংস্কৃতি এত বিশাল যে এর থিম কখনো শেষ হওয়ার নয়। আর হরিতকীও সেই সমুদ্র ভাণ্ডার থেকে একের পর এক চমক নিয়ে আসে প্রতিনিয়ত।
রিকশা পেইন্টিং, পটচিত্র, যামিনী রায়, ভ্যান গগের আঁকা ছবির ডিজাইনের পোশাক হরিতকীর সিগনেচার আইটেম। সবই সমান তালে বিক্রি হয়। তবে রিকশা আর্টটা একটু বেশিই জনপ্রিয়। হরিতকীর জনপ্রিয়তা এতই যে প্রত্যেকটি পোশাকই সাড়া ফেলে দেয় ফ্যাশন সচেতন মানুষের মাঝে। তবুও যদি হরিতকীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি পোশাকের নাম বলতে হয়, তবে যে পাঁচটি নাম সবার আগে আসবে সে দিকে চোখ বোলানো যাক।
১. যামিনী রায়ের মোটিফে করা কামিজ পিস। সুতি টাইডাইয়ের ওপর যামিনী রায়ের স্ক্রিন প্রিন্টের ইয়ক কাতান লেস দিয়ে বসানো। কয়েকটি রঙের রয়েছে, তবে বেশি বিক্রি হয় নীল রঙেরটা। যার মূল্য ৯০০ টাকা।
২. এরপর গ্রামের দৃশ্যের শাড়ি। এটা আর্ট সিল্কের ওপর ডিজিটাল প্রিন্ট। যার মূল্য ২৫০০ টাকা।
৩. রিকশা প্রিন্টের স্কার্ট। রিকশা প্রিন্টের পণ্যগুলোর মাঝে স্কার্টটা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বাটারসিল্ক কাপড়ে ডিজিটাল প্রিন্ট করা এই স্কার্টের মূল্য রয়েছে ১৫০০ টাকা।
৪. মুঘল ডিজাইনের শাড়ি। এটিও ডিজিটাল প্রিন্টের একটি আর্ট সিল্ক শাড়ি। এর মূল্য ২৫০০ টাকা।
৫. দ্যা স্ট্যারি নাইট সিরিজ। এই সিরিজের যত পণ্য সবই বেশ ভালো জনপ্রিয়। এই সিরিজে আছে কয়েকটা কামিজ, ২ টি স্কার্ট, ১ টা ব্যাগ, কয়েকটি শাড়ি।
দামের দিক থেকে মধ্যম পর্যায়। ব্লাউজ পিস পাওয়া যায় ৩০০ টাকা থেকে শুরু, কামিজ পিস ৭০০ থেকে শুরু, ওড়না ৭৫০ থেকে শুরু, স্কার্ট ১২০০ থেকে শুরু, রেডিমেড জামা ১২৫০ থেকে শুরু, শাড়ি ১৯০০ থেকে শুরু। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অফার চলে তখন দাম আরো কিছুটা কমে পাওয়া যায়। বর্তমানে হরিতকীর সব কাজই ডিজিটাল প্রিন্টে। তবে শুরুতে এমনটা ছিলো না। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে যখন এর যাত্রা শুরু হয় তখন কাজ করতো ন্যাচারাল ডাই, ব্লক, বাটিক, হ্যান্ডবাটিক, টাই ডাইয়ের ওপর ইয়ক বসায়। এরপর হলো স্ক্রিন প্রিন্টে এখন রয়েছে ডিজিটাল প্রিন্টে।
হরিতকী কখনো গতানুগতিক ফ্যাশন নিয়ে কাজ করে না। হরিতকী নিত্যনতুন ট্রেন্ড তৈরির চেষ্টা করে। তাই বছরে বছরে ডিজাইন প্যাটার্ন চেঞ্জ করে তারা। এবার চলুন জেনে আসা যাক। ভিন্নধর্মী এই ফ্যাশন হাউজের নামেও কেন এমন ভিন্নতা।
হরিতকীর প্রতিষ্ঠাতা বলরাম পাল বলেন, ‘এই হরিতকী নামে কিছুই নাই। হরিতকী দিয়ে ন্যাচারাল ডাই করা হয় বেশ সুন্দর একটা রঙ আসে। আমরা তো বিজনেসের শুরুতে ন্যাচারাল ডাই-টাই-ডাই ব্লক বাটিক করতাম। এখন আর সেভাবে করছি না। আমরা প্রতিনিয়ত নতুনভাবে নিজেদের সাজাই। তাই এখন এই হরিতকীর সঙ্গে আমাদের সামঞ্জস্য নেই কিন্তু অতীতে ছিল। অতীত তো আমাদেরই অংশ।’
সুদূর ভবিষ্যতে হরিতকী ফ্যাশন দুনিয়ায় কী কী ধামাকা নিয়ে আসবে তা এখনো আঁচ করা না গেলেও নিকট ভবিষ্যতে এবার শারদীয় ডিজাইন আসবে ভিন্ন আঙ্গিকে।
সাক্ষাৎকার – বলরাম পাল। কো ফাউন্ডার, হরিতকী।