স্ত্রীর কাছে সত্য গোপন’, অবহেলার শিকার নারী
নারী কখনো মা, কখনো বোন, আবার কখনো স্ত্রী। নারীর সম্মান নিয়ে কথা বলা হয়েছে প্রতিটি ধর্মে। তাদেরকে দেয়া হয়েছে উচ্চ মর্যাদা। কিন্তু সাম্প্রতিককালের আলোচিত কিছু ইস্যু নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নারীর সম্মান।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করার সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ঘেরাও করেন এলাকাবাসী। ওই দিন তিনি জানান, সঙ্গে থাকা নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্তু কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না। তা ছাড়া রিসোর্টে স্ত্রীর নাম সঠিক বলেননি মামুনুল।
ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর মামুনুল হক লাইভে এসে বলেছেন, , ‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোন সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’ অবশ্য এক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে সত্য গোপনের অবকাশ রয়েছে তা তিনি বলেননি। কিন্তু বেশ খোলসাভাবেই স্বামীদেরকে সত্য গোপনের একটি সুযোগ করে দিলেন তিনি।
সমাজের ইসলাম ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো যখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে ধর্মের প্রতিটি বিষয় সত্যিকার অর্থে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে। তখন তিনিই অকপটে দিয়ে দিলেন মিথ্যাচার করার সার্টিফিকেট। ইসলাম ধর্মে স্ত্রীকে খুশি করতে সীমিত পরিসরে সত্য গোপনের অবকাশ আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু ইসলামে কি আদৌ সত্য গোপনের কোন অবকাশ আছে?
রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, ‘মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না।’ (মুয়াত্তা মালিক, ২/৯৯০)
সুরা আল ইমরানের ৬১ নং আয়াতে উল্লেখ আছে " তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।"
অন্যদিকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিথ্যা বলার সীমা বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অন্তরে যে মহব্বত আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা যাবে এবং এমন কথা বলবে যা দ্বারা উভয়ের হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায় এবং স্থায়ী হয়। এ থেকে অকল্যাণ নয় বরং কল্যাণের সূচনা হয়। (মুসলিম, ৬৭৯৯; সুনানে আবু দাউদ, ৪৯২৩)।
কিন্তু প্রথম স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা গোপন করা কখনোই সম্পর্ক মজবুত করেনা কিংবা কোন কল্যাণ বয়ে আনেনা। বরং এক্ষেত্রে নারী শিকার হয় অবহেলার। তার এই ফতোয়া অনুযায়ী সকলের মধ্যে নারীকে গুরুত্ব না দেয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আমাদের সমাজে নারীর প্রতি অবহেলা, তার প্রাপ্য সম্মান না দেয়ার মতো সমস্যাগুলো বহু আগে থেকেই রয়েছে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তার এই উস্কানিমূলক বক্তব্য এ সমস্যাগুলো আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ইসলাম ধর্মে নারীকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সেখানে ইসলামের অপব্যাখ্যা করে নারীর প্রতি অবহেলা, নারীর অসম্মান করা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত?