পুঁজিবাজারে নারীর বিনিয়োগ: উন্নয়নের নতুন দুয়ার
উনিশ শতকে অবিভক্ত বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে নারীর ভূমিকা প্রায় ছিল না বলেই গণ্য করা হতো। সময় প্রবাহমান। পরিবর্তনের প্রবাহে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে নারীরা। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের বিষয়টি বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দাবি রাখে।
নারী-পুরুষের এই প্রতিযোগিতায় সমান তালে এগিয়ে যেতে রাত দিন পরিশ্রম করছে নারীরা। কেননা নারীকে সংসার,সন্তান, পাঁচকূল থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে ও অবদান রাখতে হচ্ছে। টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী নারী লড়ে যাচ্ছে অনবরত। যা একজন নারীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। একজন পুরুষ কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে তার পরিবারেও অবদান রাখছে, এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া প্রায় দুরূহ। কিন্তু ঠিক একই কাজ নারীরা বাইরে থেকে করে এসে আবার ঘরেও করতে হচ্ছে।
যদি কোনো নারী বাইরে বের হতে না পারে কর্মসংস্থানের জন্য, তখন তিনি ঘরে বসেই কিছু করতে চেষ্টা করছেন। বর্তমান যুগে অনলাইনে টাকা আয়ের মাধ্যম ব্যাপক। এই বিস্তৃত ক্ষেত্রে নারীরা বিক্রি করে চলেছেন তাদের তৈরি নানান দ্রব্য। আবার ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও তারা তাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠান আইএফসি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একটি তথ্য সবার সামনে উপস্থাপন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শেয়ারবাজারের কোম্পানিতে বেড়েছে নারী প্রতিনিধিত্ব’। প্রতিনিধিত্বের জায়গায় যেখানে গতবছর নারীর অবস্থান ছিল ১৮ শতাংশে, সেখানে বছর না ঘুরতেই সেই হার গিয়ে পৌঁছেছে ১৯ শতাংশে। নারীর উন্নয়নে এই অগ্রগতি অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশের মতো এমন একটা রাষ্ট্রে নারীকে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের মেধা আর পরিশ্রমের দ্বারাই। তারা নিজ নিজ দক্ষতায় এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও পিছিয়ে পড়া নারীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রাচীন, অসহনীয়, প্রচলিত প্রথার বেড়াজালে কিছু নারীর জীবন এখনো পিছিয়ে আছে। তারা তাদের এমন সহযোদ্ধা খুঁজে পাননি যারা সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সামনে নিয়ে যাবে। দুজন সমান তালে হাঁটার প্রত্যয় ব্যক্ত করবে। আগে এই অবস্থা ছিল ভয়াবহ। যদিও কালের পরিবর্তনে এর মাত্রা কমে এসেছে বহুগুণ। তবে দিনদিন এর হার কমে এলে পৃথিবী এগিয়ে যেতো আরও তাড়াতাড়ি।
পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সফলতার কোঠায় পৌঁছাতে পারেনি নারীকে ছাড়া। এর বড় প্রমাণ যুগযুগ ধরে মনীষীদের দেওয়া অমৃত পদাবলীর মাধ্যমেই জানতে পারি। নারীরা পিছিয়ে থাকলে পৃথিবীও পিছিয়ে যাবে। আর বর্তমান যে যুগ এখানে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া আমরা কোনো সেক্টরকেই কল্পনা করতে পারি না। প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে নারীর অবদান অনস্বীকার্য।
নারী শুধু কামনা বাসনা পূরণের জন্য সৃষ্টি হয়েছে, এমনটা এখন আর ভাবলে চলবে না। নারী একটা ব্র্যান্ড। নারী একটা শক্তি। নারী একটা হাতিয়ার যা পৃথিবীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বক্ষেত্রেই অবদান রেখে যাচ্ছে।