পাক্ষিক অনন্যা ও লবী রহমান’স কুকিং ফাউন্ডেশনের পিঠা উৎসব
‘এক রাজার দুই বৌ ছিল। একদিন বড় বৌকে পিঠা বানাতে বললে ছোট বৌ গোপনে স্বাদ নষ্ট করার জন্য পিঠার ওপরে তিল ছড়িয়ে দেন। রাজা সেই পিঠার স্বাদেই মশগুল। এদিকে, হিংসায় ছোট বৌয়ের মনে মোচড় কাটে’-এমন গল্প প্রচলিত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘সতিন মোচড়’ পিঠা তৈরি পেছনে। বিলুপ্ত এই পিঠাটি বাংলাদেশের একটা অতি প্রাচীন হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক পিঠা উৎসবে দেখা মেলে এই পিঠার। নামের মাঝেই আকর্ষণ। সেইসঙ্গে স্বাদেও অনন্য এই পিঠার কারিগর বগুড়ার উদ্যোক্তা নাদিরা হাসান সেরা নির্বাচিত হন।
শুক্রবার পাক্ষিক অনন্যা ও লবী রহমান’স কুকিং ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ উৎসব শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায়। এই উৎসবে ৩১টি স্টলে রাজশাহী, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও বগুড়ার রন্ধন শিল্পীরা হরেক রকমের পিঠা-পায়েস নিয়ে হাজির হন। বাহারি স্বাদের পিঠার সুগন্ধে সেখানকার পিঠাপ্রেমীদের রসিক করে তোলে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা স্টলগুলোয় সাজানো হয় নানা রঙ আর ঢঙে। পিঠাপুলির গায়ে লাগানো ছিল হরেক রকমের নেমপ্লেট।
পিঠাপুলির বাহারি নাম পিঠা খাওয়ার স্বাদ আরও আকর্ষণ দুই বাড়িয়ে দেয়। এসব পিঠার মধ্যে বেশ পরিচিত পিঠা-চিতই, তেলের ভাপা, পাটিসাপটা, বাদাম পিঠা, নকশি, সেমাই, সাঁজের, রসের, পাক্কন, বিউটি পাপড়ি, মাংস, পুলি ইত্যাদিও ছিল। এছাড়া ছিল অঞ্চলভিত্তিক নানারকম পিঠা ।
অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা ও প্রদর্শনকারীদের সাজসজ্জাও ছিল অন্যরকম। পুরুষের নকশি করা পাঞ্জাবি, নারীদের লাল-সবুজের বাহারি শাড়িতে মুখরিত ছিল পিঠা উৎসবের নান্দনিক পরিবেশ। সকাল থেকেই ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে, বিকেলে অনন্যা পিঠা প্রতিযোগিতা ও উৎসব এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ড. মো. জাফর ইকবাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবিন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও বিবিএ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. মেহে জেবন্নসা রহমান। এতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক শেফ টনি খান, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ রিজেপি এর ডিরেক্টর শেফ আহমেদ ও মাস্টার শেফ ড্যানিয়েল সি গোমেজ। সভাপতিত্ব করেন লবী রহমান’স কুকিং ফাউন্ডেশন প্রধান লবী রহমান।
প্রতিযোগিতায় অন্যান্য বিজয়ীরা হলেন, সুরাইয়া আক্তার, সাবিরা সুলতানা, সাহানা ইয়াসমিন, মেহেরুন আক্তার মেরি ও রুহুল আমিন। প্রত্যেকের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও অর্থমূল্যের ডামি চেক তুলে দেন অতিথিরা।
এ সময় অধ্যাপক ড. মো. জাফর ইকবাল বলেন, আমরা যখন বিদেশে যেতাম,তখন সঙ্গে করে রান্নার বই নিয়ে যেতাম। বর্তমানে ছেলে-মেয়েতে কাজের কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই সব কাজ করছে। এখানেও পিঠা ছেলেরা তৈরি করছে। প্রতিবছর আমি দুটি প্রতিযোগিতার জন্য অপেক্ষা করি, এর মধ্যে অন্যতম পিঠা উৎসব। কারণ এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পিঠা দেখা যায়। স্বাদও নেওয়া যায়। তিনি আয়োজকদের বাংলা ইংরেজিতে পিঠার রেসিপির বই প্রকাশের আহ্বান করেন।
তাসমিমা হোসাইন বলেন, এখন পান-সুপারিসহ খাবার দোকানগুলো অনেক বাহারিভাবে উপস্থাপন করা হয়। খাবার-দাবারের দোকানের প্রসার-প্রচারও বেশি। কোভিডের সময় প্রায় ১৪ লাখ নারী স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। কতরকম কাজ করছে তারা। আমরা নারী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেত্রী, শিক্ষামন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখেছি। যুদ্ধ করে নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। আমি সবসময় এমন নারীদের পাশে আছি।