Skip to content

৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়িশাদের হাত ধরে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নারীরা সর্বংসহা। সবসময়ই অনন্যতার দাবিদার। এই কোমলপ্রাণ নারীরা পারে না, এমন কিছু পৃথিবীতে হয়তো সত্যিই নেই। তবে আমাদের দেশের নারীরা সর্বত্র নিপীড়িত। শৈশব থেকে নারীদের সঙ্গে যে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয় মৃত্যু অবধি তা থেকেই যায়। ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীরা লড়াকু। নিজেদের টিকিয়ে রাখতে কোথায় না এই নারী সমাজ তাদের লড়াই জারি রাখেনি!

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবার; সমাজে সবাই নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার পক্ষপাতী। নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চক্ষুশূল যেন। তারপরও নারীদের অগ্রযাত্রা স্মরণ করে রাখার মতো। কচ্ছপের গতি যেমন ধীর তবু বিজয়ের মালা পরিহিতা এই নারীরাও শত প্রতিকূলতা পায়ে ঠেলে বিজয়মাল্য গলায় পরে।

দেশ ও দেশের বাইরে সমানতালে নিজেদের শতভাগ এগিয়ে নিতে চেষ্টা করে চলেছে। তবে নারীরা যদি সমাজের সর্বস্তরের সহোযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের অধিকারী হতো তবে তাদের অগ্রযত্রা আরও শতগুণ বর্ধিত হতো। এরপরও আশার কথা এই যে, রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ গান যেন অধিকাংশ নারীরই প্রাণের প্রতিধ্বনি, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।’ আমাদের নারীরাও এই একলা চলাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। দুঃখ-দুর্দশাকে কাটিয়ে উঠতে নিজেদের যোগ্যতা-মেধাকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে। আর এর মাধ্যমেই জায়গা করে নিচ্ছে বিশ্ব মানচিত্রের ইতিহাসে।

সর্বত্র নারীরা নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে তার প্রমাণ আবারও জাতির সম্মুখে তুলে ধরেছেন, মায়িশা রহমান। চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে জন্ম মায়িশা রহমানের। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে। তবে এ নারীর জীবনের গল্প অন্য নারীদের চলার পথকে সমৃদ্ধ করবে৷ যেকোনো কাজই নারীরা করতে পারে। শত প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নারীর ইচ্ছেশক্তির কাছে হেরে যায় সব। সেই ধারাবাহিকতায় আবারও নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন মায়িশা।

চায়ের গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন তিনি। দাদা ছিলেন চা–বাগানের ব্যবস্থাপক। সেই ধারাবাহিকতায় বাবা-চাচাও কর্মজীবন শুরু করেছেন চা–শিল্পে। চা–পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মায়িশা রহমান। অনেকটাই উত্তরাধিকার বলে এই কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় তাকে ততটা কষ্ট করতে নাহলেও তিনি চা শিল্পের ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবেন। কারণ, চট্টগ্রামে চা নিলামের ৭২ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী হিসেবে নিলাম পরিচালনার আসনে বসেছেন। তার হাত ধরেই বিক্রি হচ্ছে সিলেট, চট্টগ্রাম কিংবা উত্তরাঞ্চলের সমতলের চা। প্রতি সপ্তাহের নিলামে টেবিলে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে বিক্রয় নিশ্চিত করে যাচ্ছেন তিনি।

মায়িশার সফলতার এই গল্প অদম্য নারীদের প্রেরণাদাতা কারণ অনেক নারীই জীবনের পথে চলতে গিয়ে দিশা হারিয়ে ফেলেন। পরিবার, সমাজের ভয়ে নারী হয়ে অনেক কাজে নিজেদের অযোগ্য ভাবেন। ভয়, লজ্জা, সংকোচের কারণে ইচ্ছে থাকার পরও পছন্দের কাজ করতে পারেন না। ফলে বর্তমান সময়ে নারীরা ইচ্ছে করলে সব কাজেই অংশগ্রহণ করতে পারেন। রাখতে পারেন যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধার পরিচয়। সেই দৃষ্টান্ত আজকের সমাজে খুব একটা কমও নয়।

শত প্রতিকূলতার বুকে পদাঘাত করে একেকজন মায়িশা রহমান হাজারো নারীর বাধার দেওয়াল ভেঙে দিক। নারীর পথ চলাকে প্রসারিত করতে অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠুক। সর্বোপরি মায়িশা রহমানদের হাত ধরে এগিয়ে যাক আমাদের সোনার বাংলাদেশ। ঘুকে যাক জরা। সৃষ্টি হোক নারীর জন্য সুস্থ, সুন্দর, কল্যাণকামী পৃথিবী।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ