Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুশান্তের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অনলাইনের পাতা খুললেই এখনো হাসিমাখা মুখটা সামনে আসে। জীবন্ত সব ছবি। তাঁর তীক্ষ্ণ চাহনি আর মিষ্টি হাসি মুহূর্তে মনকে কেমন শান্ত করে দেয় যেন। অথচ পৃথিবীর কোথাও আর তার কোনো বিচরণ নেই। সুশান্ত সিং রাজপুত,  মনে আছে নিশ্চয়ই সবার এই প্রিয় তারকার কথা। মৃত্যু কি ভয়ংকর এক সত্য।  

গতবছর ১৪ ই জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে  তাঁর  ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।  রহস্যময় এই মৃত্যু একবছর পরেও রহস্যই রয়ে গেলো। সেসময় দেশজুড়ে এই মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও  সিবিআই–ইডি–এনসিবি মিলে তদন্ত  করে কোনো কুল কিনার করতে পারেনি কিংবা করেনি৷ 

বলিউডের সুপারস্টারদের পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে যাত্রা শুরু করে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই স্টার হিসেবে মঞ্চ কাঁপিয়ে গেছেন এই অভিনেতা। ব্যক্তিগত জীবনে সুশান্ত ছোট বেলা থেকেই প্রথম সারির ছাত্র ছিলো৷ লেখাপড়ায় দুর্দান্ত ক্যারিয়ার হতে পারতো সুশান্তের।  মায়ের মৃত্যুর পর ২০০২ সালে সুশান্ত তার পরিবারসহ দিল্লিতে চলে আসে৷ দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (অল ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স এক্সাম) প্রবেশিকা পরীক্ষায় গোটা ভারতে সপ্তম স্থান অর্জন করে এই মেধাবী তারকা। 

ভারতের ‘ফিজিক্স ন্যাশনাল অলিম্পিয়াডে’ বিজয়ীও হন। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যাত্রাপথে হঠাৎ  আগ্রহ জন্মে থিয়েটারে। তারপর থেকে অভিনেতা হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। ছেড়ে দেন নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। এত গৌরবময় রেজাল্ট সবটা বাদ দিয়ে যোগ দেন অভিনয় ও নাচের ক্লাসে। 

বলিউডে তখন স্বজনপ্রীতি পাল্লা দিয়ে চলছে। ঠিক সেসময় সুশান্ত নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার ছেড়ে আসে অভিনয়ে। নাচের মুদ্রাও বেশ দক্ষতা নিয়েই রপ্ত করেছিলো সুশান্ত।  তার নাচের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ভারতের বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার শামক দাভরের তাকে কমনওয়েলথ গেমসে ও ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার অনুষ্ঠানে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে পারফর্ম করার সুযোগ দেন। বাস! নাচ দিয়ে শুরু করে মঞ্চ কাঁপিয়ে নিজেকে নিয়ে আসে প্রথম সারির অভিনেতাদের কাতারে। 

'কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ধারাবাহিকের নায়কের ভাই হিসেবে প্রথম পর্দায় আসেন সুশান্ত। তারপর 'পবিত্র রিশতা’ টেলিভিশন ধারাবাহিক থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই অভিনেতা। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন সুশান্ত। শুধু নিজের প্রতিভার জোরে নিজেকে নিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর এক এক করে শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স (২০১৩), পিকে (২০১৪), ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি (২০১৫), এমএস ধোনি জীবনীচিত্র (২০১৬), কেদারনাথ (২০১৮), ড্রাইভ (২০১৯) সহ ১৬টি ছবিতে ছোট-বড় চরিত্রে অভিনয় করেন সুশান্ত। 

তারমধ্যে এমএস ধোনি জীবনী-চিত্রে ভারতের সফল অধিনায়ক ধোনির চরিত্র করে ব্যাপক আলোচনায় আসে। মৃত্যুর ঠিক আগেই ছিঁছোড়ে’তে অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিলেন৷  যে সিনেমায় তার আলোচিত উক্তি হয়ে ওঠে 'আত্মহত্যা কোনো সমাধান  নয়'। সুশান্তের মৃত্যুর পরই মুক্তি পায় তার সর্বশেষ অভিনীত সিনেমা 'দিল বেচারা'। হাজার হাজার মানুষ  এই সিনেমা দেখে সুশান্ত বিদায়ের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলো চোখের পানিতে। প্রিয় তারকার এমন অকাল মৃত্যু দর্শক মনে এক অপার শূন্যতা তৈরি করে গেছে। তবুও সুশান্ত বেঁচে আছে তাঁর কাজে, তাঁর প্রতিভায়, তাঁর অভিনয়ে, তাঁর সিনেমায়।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ