Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেদারল্যান্ডসে ঐতিহ্যের ওপর কালো ছায়া কাটানোর উদ্যোগ

আজকের যুগে মানুষ নানা ধরনের বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন৷ কিন্তু যেসব ঐতিহ্যের মধ্যে এমন নেতিবাচক প্রবণতা লুকিয়ে রয়েছে, সেগুলি বর্জন করা অনেক সমাজের জন্য কঠিন৷ নেদারল্যান্ডসে ঠিক এমনই এক বিতর্ক চলছে৷
নেদারল্যান্ডসে ‘সিন্টারক্লাস’ বা সান্টা ক্লস বিশেষ করে শিশুদের কাছে সান্টা ক্লজ অত্যন্ত প্রিয়৷ অনেক দেশের রীতি অনুযায়ী ৬ ডিসেম্বর ভোররাতে সান্টা ক্লজ ‘ভালো বাচ্চাদের’ জন্য উপহার নিয়ে আসে৷ সঙ্গে পিট নামে তার বিতর্কিত ভৃত্যও থাকে৷ প্রশ্ন হলো, নভেম্বর মাসের শেষেই কেন তারা স্টিমবোটে করে পৌঁছে যান? সিন্টারক্লাস নিজে জানালেন, ‘‘তখন আমাদের হাতে কিছুটা প্রস্তুতির সময় থাকে৷ তাছাড়া কোন কোন বাচ্চা দুষ্টুমি করেছে, তা-ও জানতে পারি৷ পিট নিরাপদে বাড়ির ছাদের উপর উঠতে পারবে কিনা, সেটাও দেখতে হয়৷”

আমস্টারডামের উত্তরে সানডাম শহরে সবাই আগ্রহ নিয়ে সান্টা ক্লজ ও তাঁর পিটদের জন্য অপেক্ষা করছে৷ সিন্টারক্লাসের সহকারী হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একাধিক পিট বাচ্চাদের উপহার নিয়ে আসে৷ কিংবদন্তি অনুযায়ী তারা বাসার চিমনি বেয়ে নেমে আসে৷

নেদারল্যান্ডসে পিটের চরিত্র বেশ বিতর্কিত৷ কারণ অতীতে তার নাম ছিল ‘সোয়ার্টে’ বা কৃষ্ণাঙ্গ পিট৷ শ্বেতাঙ্গ মানুষ তার চেহারায় কালো মুখ, লাল ঠোঁট, সোনালী কানের দুল ও কোঁকড়া কালো পরচুলা যোগ করেছিল৷

অ্যাক্টিভিস্ট ও শিল্পী কুইন্সি গারিও দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ পিটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷ এমন মনোভাব ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘এই চরিত্রের মধ্যে ঔপনিবেশিক যুগকে ঘিরে বিষণ্ণতা এবং নস্টালজিয়া বা টান জড়িয়ে রয়েছে৷ কারণ এই চরিত্রের মধ্যে আমরা সমাজে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের স্থান দেখিয়ে দেবার রীতি খুঁজে পাই৷ শ্বেতাঙ্গ মানুষের সেবাই যেন তার কর্তব্য৷”

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ‘কৃষ্ণাঙ্গ পিট’-এর এই চরিত্র সৃষ্টি করা হয়, যা আজ বিতর্কের কারণ, হয়ে উঠেছে৷ সেই যুগে নেদারল্যান্ডস মসলা ও ক্রীতদাস বাণিজ্যের কারণে ধনী ঔপনিবেশিক শক্তি হয়ে উঠেছিল৷

নেদারল্যান্ডসের ঐতিহ্য থেকে বর্ণবাদ দূর করার পদক্ষেপ

গত কয়েক বছরে এই চরিত্রের পক্ষে ও বিপক্ষে চরম সংঘাতের পর জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী নেদারল্যান্ডসের সংখ্যাগুরু মানুষ ‘কৃষ্ণাঙ্গ পিট’ চরিত্রের পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন৷ সানডাম শহরে একটিও ‘কৃষ্ণাঙ্গ পিট’ দেখা যায় না৷ সেখানে শুধু ‘রুসপিট’ বা ‘কালিমাখা’ পিট রয়েছে, যে চিমনির ভেতরে গিয়ে নোংরা হয়ে গেছে৷ বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী ‘রুসপিট’ সেজে শিশুদের আমোদ দেন৷

১৮৬৩ সালে নেদারল্যান্ডসের উপনিবেশগুলিতে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ করা হয়েছিল৷ আমস্টারডাম শহরে ক্রীতদাস প্রথা সম্পর্কে জাতীয় সৌধ সেই যুগের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ কুইন্সি গারিও-র মতে, পিটের চেহারা নিয়ে আলোচনা আসলে একটা হারানো সুযোগ৷ কুইন্সি গারিও বলেন, ‘‘তথাকথিত সমাধানসূত্রের মাধ্যমে আমরা যা দেখছি, সেটা আসলে এই ঔপনিবেশিক স্মৃতিবিলাসের সম্মুখীন না হওয়ার প্রচেষ্টা৷ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে চলে আসা সমাজের যে সব কাঠামো এখনো চালু আছে, সে বিষয়ে আলোচনা এভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ এই রীতি এবং এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সেগুলির অন্যতম৷”

অর্থাৎ ‘কৃষ্ণাঙ্গ পিট’ নিয়ে বিতর্ক এখনো পুরোপুরি শেষ হয় নি৷ তবে তরুণ প্রজন্ম যে শুধুমাত্র পিটকেই চিনবে, সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ আর শিশুদের জন্য কারা মূলত মিষ্টি ও ভালো মেজাজ নিয়ে আসবে৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ