নারীর পোশাকের বিবর্তন যেভাবে হয়েছে
প্রায় অর্ধশত বছর আগেও নারীদের মধ্যে পর্দা করার এত প্রচলন ছিল না। পোশাক বলতে তারা শাড়িকেই বেছে নিত। মাথায় আলাদা করে কাপড় পরার প্রচলন ছিলই না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হবার আগে নারী নিজেকে বাঙালিই মনে করত।
শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে অবশ্য নারীরা নিজেদের ধর্মীয় বিধিবিধান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তবু তারা থেমে থাকেনি।
গুপ্ত-যুগে নারী ও পুরুষ উভয়েরই এক কাপড়ে আবদ্ধ থাকার প্রচলন ছিল। শাড়ি কিংবা ধূতি। অভিজাত পুরুষরা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ধূতি পরলেও সাধারণ পুরুষরা খাটো ধূতি পড়ত। নারীরা কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত শাড়ি পরত। সে-সময়ে নারী ও পুরুষ উভয়ই ঊর্ধ্বাঙ্গে অলংকার পরত।
ফ্যাশন ইতিহাসবিদ ও ব্লগার টুলিকা গুপ্ত বলেন, 'মৌর্য ও সুঙ্গ যুগে (৩০০ খৃস্টাব্দ) নারী ও পুরুষ চারকোনা কাপড় পরত। শরীরের নিচের দিকের কাপড়কে বলত অন্তরীয় আর ওপরের অংশকে উত্তরীয়।'
এ-ছাড়া, তিনি পোশাকের বিবর্তন সম্পর্কে বিস্তর ধারণা দিয়েছেন, 'নারীদের শালীন পোশাক কি বা অশালীন পোশাক কি, সেটা নিয়ে বিতর্কটা সময়ভেদে ভিন্ন হয়েছে।
যুগের পর যুগ বিভিন্ন পোশাকের আবাসনের পর পোশাক আশাকে চীন, গ্রিক ও রোমান প্রভাব পড়তে শুরু করল।’
১৫শ শতাব্দীতে ধর্মভেদে নারীদের পোশাকের ভিন্নতা আসতে শুরু করল। কাপড় সম্পর্কে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মুসলিম নারীরা নিজেকে ঢেকে রাখতে চাইত বলে আরো বাড়তি কিছু কাপড় তারা পরিধান করত। সেখান থেকেই সালওয়ার-কামিজের প্রচলন শুরু।
ভিক্টোরিয়ান আমলে, নারীরা যখন শাড়ি পরত, তখন তাদের বক্ষ উন্মুক্ত থাকত। কিন্তু ভিক্টোরিয়ান আমলে সেটা মানানসই ছিল না।
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ব্লাউজের প্রচলন শুরু করেন। কারণ, তাঁকে শাড়ির নিচে নগ্ন বক্ষের কারণে ব্রিটিশ রাজের আমলে ক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তখন থেকে শাড়ির সাথে ব্লাউজ পরার প্রচলন শুরু হয়।
এরপর আস্তে-ধীরে ব্লাউজের বিভিন্ন ধরন তৈরি হতে শুরু করে। তবে নারীর পোশাক কী হবে, সেটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো ছকবাঁধা নিয়ম কখনোই ছিল না।
বরং পোশাকের বিবর্তনের ধারাবাহিকতা ছিল অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত। অনেক ক্ষেত্রে বৈল্পবিক্ও। পোশাকের জন্য নারীদের কোনো বাধার সম্মুখীন যখন হতে হয়েছে, তখন তারা নতুন আঙ্গিকে সেই পোশাকের নতুন ধারা তৈরি করেছে। আর সেটা ছিল একটা প্রতিবাদের অংশ।
কিন্তু দেশভদে নারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কের এখনো কোনো ইতি টানা যাচ্ছে না। ধর্ম ও সামাজিকতার দায়ে নারী তার পোশাক বাছাই করে। নারীর পোশাকের সাথে আবহাওয়া, জলবায়ু, নীতি-নৈতিকতা বোধ জড়িয়ে ফেলছে অনেকে।
আবার, অনেকে এ-ও বলে, 'নারীর পোশাকের সাথে যৌন হয়রানি ও ধর্ষন জড়িত।' কিন্তু এই সব বাণী কি আদৌ সুরক্ষার পথ উন্মোচন করে? নাকি ধর্ষকদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করে?