Skip to content

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

টেবিল টেনিস খেলার নাম আসলেই সবার আগে জোবেরা রহমান লিনু তার নাম না থাকলেই নয়‌। তার নাম শুধু দেশ নয় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে গেছে। যদি বলতে হয় নারীর খেলাধুলা ও সফলতার কথা তার নাম বলতে হবেই পুরো বিশ্বকে। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে নাম উঠিয়েছেন। সে সময়ে নারীরা খেলাধুলা করবে তা এত সহজ ছিলো না। তার জীবনে খেলাধুলা নিয়ে রয়েছে নানা রকম গল্প।

 

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

 

জোবেরা রহমান লিনু ১৯৬৫ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের কাপ্তাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ আবদুর রহমান ছিলেন সরকারি প্রকৌশলী। তার মায়ের নাম আঁখি রহমান। ৪ বোন আর ১ ভাই এর মধ্যে তার অবস্থান ৪র্থ। খুলনা অধিবাসী হলেও শৈশব তার সিলেটে কেটেছে। ৮ বছর বয়সে প্রায় ৩০ফুট উঁচু টিলা থেকে লাফ দিয়ে নিজের সাহস এর পরিচয় দেন লিনু। লাফ দেবার পর চারদিকে হইচই পরে যায় নিজের আত্মঘাতী করতে নয় বন্ধুদের সাথে বাজি লাগিয়ে এমন কাজ করেন তিনি।

 

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

বাবা ও বড় বোন এর সাথেই টেবিল টেনিস খেলার যাত্রা শুরু। কখন যে তার ছোট সাদা বলটার প্রেমে পরে যান তা বলা কঠিন। তার বাবাকে বলেন এই খেলাই খেলবেন তিনি। লিনু লক্ষ্য স্থির করলেন এবং খেলার টেবিল অবদি না গিয়ে আর পিছু হটলেন না‌। মেয়ের এত খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে টেবিল টেনিস এর নানা রকম কৌশল শেখাতে বাধ্য হলেন তার বাবা।

সিলেটে থাকার সময় শাহজী বাজার অফিসার্স ক্লাবে বড় বোনের সাথে খেলতে খেলতে খেলাটাকে ভালোবাসে ফেলেন। দুপুরে খাবার পর খাবার টেবিলকে টেনিস কোর্ট করে অনুশীলন করতেন। ছোট থাকাতে বল আনতে কখনো কখনো টেবিল উপরে উঠতে হতো তার।

 

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

 

কাপ্তাই স্কুল থেকেই তার শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। তারপর সিলেটে পড়াশোনা করেছেন বেশ কয়েক বছর। এসএসসি পাশ করেন নরসিংদী জেলা থেকে। ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে এইচ. এস. সি ও ডিগ্রী পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

 

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

 

জোবেরা রহমান লিুন ১৯৭৭ সালে একক, দ্বৈত আর মিশ্র দ্বৈতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন তার বড় বোন হেলেনাকে হারিয়ে।  তখন তার বয়স মাত্র ১২বছর। সেই শুরু থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি লিনুর। খেলাই তার জীবনের পুরোটা জুড়ে থাকায় তিনি নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করেছেন এবং এখনও খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। আবহ লিমিটেড এর টেবিল টেনিস এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও কাজ করছেন তৃণ মূল এর টেবিল টেনিস এর খেলোয়াড়দের নিয়েও।  

শখের বসে ১৯৯৩ সালে সাইকেলিং ক্লাব তৈরি করছে। মানবতাবাদী লিনু মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তার শখের তালিকায় প্রথম হচ্ছে ঘুরে বেড়ানো। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোই তার স্বপ্ন। মরু থেকে বরফের রাজ্য ঘুরে বেড়িয়েছেন লিনু।

 

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

ধরা বাধা জীবন তার একদমই পছন্দ ছিলো না বলেই চলে, এর জন্য কখনো চাকরি করতে চাননি। খেলার নেশায় তার আর চাকরি করা হয়ে উঠে নি। আর খেলা কখনোই তার পেশা হিসেবে হয়ে উঠে নি কারণ এটি তার নেশা ও ভালোবাসা। সামাজিক কর্মকাণ্ডে ক্রমাগত সাফল্যই তাকে আজকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তার অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাড়ায়নি কেউ।

 

বাংলার টেবিল টেনিসের রানী

১৯৭৪ থেকে ২০০২সাল, পর্যন্ত ২৮ এর মধ্যে ১৬ বার  জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন লিনু। এছাড়া তিনি ৩ বার বাংলাদেশ গেমসের চ্যাম্পিয়ন। ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন এ রেকর্ড করে তিনি গিনেস বইয়ে নিজের নাম উঠান। তার এখন বসবাস খেলার সাথে। তিনি প্রথম নারী যিনি বাংলাদেশ টেবিল টেনিস এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে  আছেন। তার এই সাফল্য ভুলবে না বিশ্ববাসী।