Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাবির হলে ছাত্রীনির্যাতন: আর কত সইতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির মাহাত্ম্য শুধু লেখাপড়ার মধ্যেই নিহিত নয় এরসঙ্গে জড়িত রয়েছে ব্যক্তির আত্মিক ও বৌদ্ধিক উন্নয়ন। নীতি-নৈতিকতার শিক্ষণও বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনেই গড়ে ওঠে। কিন্তু বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রঙ্গণে শিক্ষার্থীদের স্খলন সামনে উঠে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটা ঘটেছে। তবে এর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবসান হবে কবে? বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সেখানে এ ধরনের নৈতিক স্খলন জাতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের রুপা নামের এক শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের করে দেওয়া ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই হলের কতিপয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। রবিবার দিবাগত রাতে রোকেয়া হলের ৭ মার্চ ভবনের ১১২১ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে। তখন ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে চাইলে বাধা দেয় হল প্রশাসন। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী ঢাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোস্তফা মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের নির্দেশে তার কতিপয় অনুসারী রূপাকে রুম থেকে নেমে যেতে বলে। এসময় রূপা অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এতে রূপা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন হাসপাতালে যেতে চাইলে তাকে হল প্রশাসন থেকে বাধা দেওয়া হয়।

পরে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় রুপাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন- হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিহা মাহুব ঐশী, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপর্ণা রায় ও পারজানা পারভীন। অভিযোগের বিষয়ে সামিহা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনি এই বিষয়ে হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আরেক অভিযুক্ত বিপর্ণা রায় বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘রাতে আমি বিষয়টি জানতে পেরে রূপার সঙ্গে কথা বলি। তাকে বারবার মারধর করা হয়েছে কি না বা কারা মারধর করেছে জানতে চাওয়া হয়। সে কিছুই বলেনি তখন।

তাকে আমাদের হলের সিকরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একজন ডাক্তার নিয়ে এসে তাকে দেখে। মারধর করা হয়েছে বা এরকম কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি তখন। ডাক্তার তার পালস দেখে শরীর দূর্বল পেয়েছে এবং সেটা সারা দিন কিছু না খাওয়ার কারণে তখন আমরা সবাই মিলে তাকে খাইয়ে দেই। সোমবার সকাল ৬টার পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুনতে পাই। এ বিষয়ে আমি তদন্ত কমিটি গঠন করবো।’

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবির রোকেয়া হলে ছাত্রী নির্যাতনের এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান দিনে দিনে এতটাই নিচে নেমে যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে যে বিবেকবোধ থাকা বাঞ্ছনীয় তার কোনটাই লক্ষণীয় নয়। নারীরাই তার স্বজাতির এতটা ক্রুর আচরণ করে কীভাবে! যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে এ সমাজ কী আশা করতে পারে?

এর আগেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরীকে বিভিন্নভবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়! কিছুদিন আগে তার রায় কার্যকর হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে অভিযুক্তদের ১ বছরের জন্য ছাত্রত্ব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে! যা নির্যাতনের তুলনায় যোগ্য শাস্তি নয় বলেই সাধারণের মত। কারণ পরবর্তী এই শ্রেণি আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন করে অন্যের সঙ্গে এ ধরনের হীন আচরণ করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? ২৩ জুলাই ঢাবির রোকেয়া হলে রূপা নামের এক ছাত্রীকে যেভাবে নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা হয়েছে তা অত্যন্ত অন্যায়। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছেই! ফলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিলের পাশাপাশি জেলে-জরিমানারও ব্যবস্থা করার বিধান করতে হবে। নতুবা ফুলপরী, রূপাদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে!

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান। সেখানে কেউ যদি পাওয়ার ও পজিশন বলে অন্যদের দাবিয়ে রাখতে চায় সেটা অন্যায়। শিক্ষালয় কখনও বৈষম্য ও শোষণের পক্ষে হতে পারে না। শিক্ষালয় সবর্দা নীতি-নৈতিকতা-মনুষ্যত্ব ও বোধের শিক্ষা দেয়। সেখানে অনৈতিক আচরণের জন্য কোন জায়গা থাকা উচিত নয়। এ ধরনের হিংস্র ঘটনা যেন আর না ঘটে সেলক্ষ্য কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ