Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ শেখান

রোজকার দিনে আমাদের শরীরে কাঙ্ক্ষিত স্পর্শ তো কিছুই থাকেই। তবে সবথেকে বেশি আতঙ্কিত করে রাখে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু স্পর্শ।  কিন্তু এই কাঙ্ক্ষিত স্পর্শ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের মতো কঠিন কঠিন শব্দগুলো শিশুদের বোধগম্য হবেনা। তাই শিশুকে সহজ ভাষায় শেখাতে হবে কোনটি ভালো স্পর্শ, কোনটি মন্দ স্পর্শ।  

 

আমাদের সমাজে বড় একটি সমস্যা হলো, সঠিক প্যারেন্টিংয়ের অভাব। যৌন শিক্ষা থেকে শুরু করে বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন কোনোকিছুর বিষয়েই অভিভাবকরা সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেননা। এতে করে বড় হতে হতে এসব বিষয়ে সন্তানদের জ্ঞানের অভাবে তারা যেকোনো অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে।  তাদের মানসিক গঠনে এসব বিষয় মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

 

শিশুকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ শেখান

আমাদের সমাজে কোনো অভিভাবককে যদি বলাও হয়, তার সন্তানকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে শেখানোর জন্য তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একতরফা কন্যাশিশুকেই শিক্ষা দেয়া হবে। তবে তা না  করে স্পর্শ সম্পর্কে শেখানো উচিত ছেলে ও মেয়ে সন্তান উভয়কেই। 

 

বর্তমানে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশুরা।  পরিসংখ্যান অনুযায়ী দিনের পর দিন বাড়ছেই এসব অন্যায়ের সম্মুখীন হওয়া শিশুদের সংখ্যা। আসক তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের হিসাব মতে, ২০২১ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৫৯৬ শিশু।

 

শিশুকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ শেখান

এসব ঘটনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিশুদের  যৌন শিক্ষা কিংবা ভালো স্পর্শ, মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা বুঝতেও পারেনা তাদের সাথে কি ঘটছে তাই অপরাধী সুযোগ পেয়ে তার অপরাধ চলমান রাখেন। আবার অনেক শিশু তো নিজেকেই দোষী মনে করে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। 

এসবকিছুর পেছনে একটিই কারণ। তা হলো, শিশুকে সঠিক সময়ে সঠিক বিষয়ে না জানানো। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের সমাজের চলমান বিভিন্ন ট্যাবুর কারণেই শিশু একটা সময় নিজেকে অপরাধী ভাবা শুরু করে। এমনকি ছেলে শিশুদের এসব শিক্ষার অভাবে ভবিষ্যতে সে নারীদের সাথে অশোভন আচরণ করতে পারে। 

 

শিশুকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ শেখান

তাই এসকল বিষয়গুলো এড়াতে শুরু থেকেই পারিবারিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশুকে বোঝাতে কোনটি ভালো স্পর্শ এবং কোনটি খারাপ স্পর্শ। তবে হুট করে একদিনেই এসব কঠিন আলোচনা করে তার ছোট মস্তিষ্ক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে দিবেন না। এ বিষয়ে শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে ধীরে ধীরে।  অবশ্যই এসব বলার আগে সন্তানের সাথে তেমন একটি সম্পর্ক ও পরিবেশ তৈরি করে নিবেন। এতে করে তার বিষয়টি মানিয়ে নিতে আরো সহজ হবে। 

শুরুতেই শিশুকে শেখাতে হবে তার শরীরের কোন কোন অংশ গুলো গোপন অঙ্গ এবং কোন অংশগুলোতে, কেমন ধরনের স্পর্শগুলোকে আমরা খারাপ বা মন্দ স্পর্শ বলে থাকি। আপনার কন্যা সন্তানকে যখন এই বিষয়ে অভিহিত করবেন ঠিক সে সময়ে আপনার ছেলে সন্তানকে শেখাবেন, তার পাশে বা সামনে থাকা নারীকে কোথায়, কিভাবে স্পর্শ করা যাবে এবং কিভাবে যাবেনা। 

 

শিশুকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ শেখান

অর্থাৎ আপনার সন্তানকে আপনি মূলত দুই ধরনের শিক্ষা দিবেন। প্রথমত, কারো শরীরের ব্যক্তিগত জায়গা স্পর্শ করবেনা আবার কাউকে তোমার শরীরের ব্যক্তিগত জায়গা স্পর্শ করতে দিবেনা। এছাড়াও আরো একটি বিষয় তাদেরকে শেখাতে পারেন তা হলো অনাকাঙ্ক্ষিত তবে নিরাপদ স্পর্শ কোনটি। শিশু একতরফা ভালো ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে শিখলে চলার পথে কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে ভীত হতে পারে কিংবা রেগে যেতে পারে। তাই তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত তবে নিরাপদ স্পর্শ সম্পর্কেও শেখাতে হবে। 

 

আমরা ছোটবেলা থেকেই শিশুদের একটা শিক্ষা দিয়ে থাকি, 'বড়দের মুখের উপর না বলতে নেই'। এই কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর সাথে ঘটে যাওয়া অত্যাচার বা অন্যায় শিশুরা চুপ করে সহ্য করে যায়।  অনেক সময় তারা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেও দিন পার করেন। তাই শিশুদের কিছু কিছু বিষয়ে 'না' বলার শিক্ষাও দিতে হবে। 

 

শিশুকে ভালো স্পর্শ ও মন্দ স্পর্শ শেখান

শুধু ভালো স্পর্শ কিংবা মন্দ স্পর্শ শিখিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবেনা। তার সাথে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে কি কি করণীয় এবং কিভাবে প্রতিবাদ করা উচিত সে সম্পর্কেও শিক্ষা দিতে হবে। শুধু তার সাথে ঘটলেই নয়,  তার সামনে অন্যকারো সাথে এমন ঘটনা ঘটলেও তার প্রতিবাদ করা উচিত এই শিক্ষাও দিন। 

 

সমাজে প্রতিনিয়ত নারীরা ঘরে বাইরে হয়রানি, যৌন হয়রানি, ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোর শিকার হচ্ছেন। প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে শিশু সবাই শিকার হচ্ছেন এসব অন্যায়ের। আর এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা যায়, সঠিক যৌন শিক্ষার অভাব।  যার কারণে এসব ঘটনার শিকার শিশুরা যেমন বুঝতে পারছেনা তার সাথে কি ঘটছে। আবার বড় হয়েও নারীরা মুখ বুঝে সহ্য করছেন এসব অন্যায় আর পুরুষরা সঠিক শিক্ষার  অভাবে এসব অপরাধ করে যাচ্ছেন।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ