নতুন চাকরির প্রস্তাব, যেভাবে জানাবেন বসকে!
বর্তমানে চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ। কেউ চাকরির জন্য ঘুরেফিরেও চাকরি পায় না, আবার কেউ এক চাকরি থাকতেই আরেক চাকরি পেয়ে যায়। নতুন চাকরি পেলেই যে পুরনো বা বর্তমান চাকরি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব কিংবা বিরক্তি-ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে এমনটা না। বর্তমান চাকরির একটা ভালো রেফারেন্স ভবিষ্যতের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে হঠকারিতা থেকে বিরত থাকতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে সঠিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সামনে আগাতে হবে। যদি আপনার ভাগ্য ভালো থাকে এবং কথা বলাতে দক্ষতা থাকে তাহলে এমনও হতে পারে যে আপনার বর্তমান অফিস থেকেই আপনাকে আরও বড় পদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলো।
চলুন তবে আজ জেনে নেই, চাকরি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় এবং বসকে নতুন চাকরির সুযোগের কথা কিভাবে জানানো যায় –
১. আগে বিবেচনা করুন –
কর্মজীবনে আপনি কি করতে চান, কাজের উদ্দেশ্য কি তা প্রথমে বুঝতে হবে। নতুন কোনো প্রস্তাব পাওয়া মানেই যে আপনি পুরাতন চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছেন বিষয়টি এমন নয়। এমন পরিস্থিতিতে আগে বিবেচনা করুন, দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা করুন এরপর সিদ্ধান্ত নিন। আপনি চাইলে নতুন সুযোগটিকে বর্তমান কোম্পানিতে স্বার্থসিদ্ধির উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি সিদ্ধান্ত হয়, নতুন সুযোগটি আপনি গ্রহণ করবেনই, তাহলে তৈরি হয়ে যান ম্যানেজার বা আপনার বস কে জানাতে।
২. বসের সুবিধা-মতো সময়ে আলোচনা করুন-
নতুন সুযোগের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য শুরুতে একটা সময় নির্ধারণ করুন। সময়টা হতে হবে অবশ্যই বসের সুবিধা-মত। যেকোনো বিষয়ে ফোনে কথা বলা আর সামনা-সামনি বসে কথা বলার মধ্যে তফাৎ থাকে, আর এসব কথা সামনা-সামনি বলাই ভালো। তবে দূরত্ব যদি খুব বেশি হয় সেক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও কথা বলতে পারেন। যদি সিদ্ধান্ত হয় সেক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে নোটিশ অন্তত দুই সপ্তাহ আগে দিন। এই সময়ের মধ্যে হাতের কাজগুলো শেষ করুন। চাকরি ছাড়ার কারণ জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি চাইলে তাদের নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা নাও জানাতে পারেন। তবে কাজ করার ফলে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার জন্য ম্যানেজারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনও ভুলবেন না এবং অফিসে আপনার শেষ দিনটির তারিখ আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।
৩. নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করবেন না –
চাকরি ছাড়ার কারণ বসকে জানান। সেটা হতে পারে বেশি বেতন কিংবা আরও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। তবে নতুন সুযোগ সুবিধার কথা ইতিবাচক ভঙ্গিতে বলুন। এমনকি যদি বর্তমান চাকরি ছাড়তে খুব আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবুও বসের সামনে তা প্রকাশ করবেন না। আপনার বর্তমান চাকরি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ও বিরক্তি-ক্ষোভ আলোচনার সময় কখনোই প্রকাশ করবেন না।
৪. আগে থেকেই উত্তর প্রস্তুত রাখুন –
বাইরে থেকে অন্য সুযোগের কথা জানানোর পর বস আপনাকে ধরে রাখার জন্য পাল্টা একটি প্রস্তাব দিতে পারেন যা অসম্ভব কোন বিষয় নয়। বস তখন সম্ভাব্য বেতনের কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন এবং আপনাকে এর চেয়ে বেশি বেতনে নিজের কোম্পানিতে রেখে দেওয়ার কথাও পারেন। এই সময়ে চিন্তা করুন, আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য কি? বেশি বেতন পাওয়াই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বসের এই অফার আপনাকে প্রলুব্ধ করবে। তবে যদি আপনি নতুন একটি পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা চান, তখন বসের এই প্রস্তাবকে এড়িয়ে যান।
৫. সমঝোতার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন –
বসের কাছ থেকে পাল্টা প্রস্তাবের আশায় বসে আছেন, কিন্তু তিনি তা দিলেন না। সেক্ষেত্রে একটু ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আলোচনার দিন নিজের বেতন, পদমর্যাদা ও চাকরির নানা দিক সম্পর্কে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করুন এবং আপনার সত্যিকার মূল্য বোঝানোর জন্য বসকে নতুন কোম্পানির বেতনের পরিমাণ টা জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে সেই পরিমাণ টাকা বর্তমান প্রতিষ্ঠানে দিলে আপনি সেখানে থাকতে রাজি তা জানান। উত্তর যদি আসে 'না', তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা নিন- থাকবেন নাকি চলে যাবেন।
পরিশেষে , আপনার সিদ্ধান্ত যেটাই হোক আপনার আত্মবিশ্বাস ও বাজারমূল্য বাড়িয়ে তুলতে নতুন চাকরির প্রস্তাব অবশ্যই সক্ষম। এছাড়া এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তুলন।