আঙুল ফোটানোর অদ্ভুত রহস্য!
প্রতিদিনের শত কাজের ব্যস্ততায় আমরা ছোট ছোট কিছু কাজের হিসাব রাখি না। তবে কিছু কিছু কাজ আমরা নিজের অজান্তেই করে ফেলি। কখনো এটা নিয়ে আবার ভাবিও না। কেনই বা করি আর কারণই বা কি। কাজের অবসরে কিংবা অলস সময়ে নড়েচড়ে আড়মোড়া ভেঙে হাতের আঙুলে চাপ দিলেই মট করে শব্দ হয়। নিজেদের ভাষায় একে আঙুল ফোটানো বলা হয় । এমনটা দেহের বিভিন্ন স্থানের হাড়ের সংযোগস্থলেই ঘটে থাকে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত-ভাবে এই শব্দ হয়ে থাকে। আসলে আমাদের হাড়ের সংযোগস্থল শব্দ সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ক্রিপিটাস। সব বয়সীদেরই হয়ে থাকে। তবে বয়স্কদের একটু বেশি হয়। প্রতিনিয়তই আমাদের অনেকের এই অভ্যাস মুদ্রাদোষে পরিণত হয়ে থাকে।
আমরা কি ভেবে দেখেছি যে কথার ফাকে, কাজের ফাকে কিংবা হুট করেই হাতের আঙুল ফোটাই এবং “পট-পটাং” শব্দ হয়। এই শব্দ অনেকে আবার দারুণ উপভোগ করে। কেন এমন হয়? আঙুলের ভেতর কি গ্যাস লাইটার, বেলুন আছে নাকি যা একটু নাড়ালেই শব্দ করে। তো এবার জেনে নেয়া যাক এই শব্দ আসলে কিভাবে উৎপন্ন হয়।
আমাদের আঙুলের হাড়গুলোর সন্ধিতে “সিনোভিয়াল ফ্লুইড” নামক এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে, যার মধ্যে নানা গ্যাসীয় পদার্থ থাকে। আমরা যখন আঙুলকে ফোটানোর জন্য সেটিকে স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরাই তখন সেই তরল পদার্থের চাপ কমে যায় এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের বাবল তৈরি হয়। সেই বাবলটি উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথেই ফেটে যায় এবং “পট-পটাং” করে শব্দ উৎপন্ন হয় যা মূলত এই বাবল ফাটার শব্দ।
অনেকেই মনে করে, নিয়মিত আঙুল ফোটানোর ফলে বাত রোগসহ নানা ধরনের সাইড ইফেক্ট হতে পারে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আঙুল ফোটানোর সাথে বাতের সম্পর্ক আছে কি না তা জানার জন্য ডোনাল্ড উঙ্গার নামে এক বিজ্ঞানী ৬০ বছরেরও অধিক সময় ডান হাতের আঙুল গুলোকে না ফুটিয়ে এবং বা হাতের আঙুল গুলোকে ফুটিয়েছেন। তিনি তার কোন হাতেই বাত রোগ পান নি তো বটেই বরং উভয় হাতের আঙুল গুলো একই ছিল। এই গবেষণার জন্য তিনি “আইজি নোবেল” বা “ইগনোবেল“ পুরষ্কার লাভ করেন।
প্রতিদিন আঙ্গুল ফোটানোর অভ্যাস যেন মনের বেখেয়ালিতে এসেই পরে। তবে হ্যাঁ নিয়মিত আঙ্গুল ফোটানোর ফলে হাতের গ্রিপিং ক্ষমতা হ্রাস হতে পারে। তাই আমাদের অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে আঙুলে ব্যথা হলে কিংবা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল টিপার ফলে আঙুলে কড়কড়ে অনুভূত হয়। তাই আঙুল ফুটিয়ে একটু আরাম পেয়ে গ্রিপিং ক্ষমতা হ্রাস না করাই শ্রেয়।