পৃথিবী বাঁচাতে হেঁটে চলছে কিশোর!
জগতের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের পালাক্রম চলছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সমীক্ষায় বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে কার্বনডাই-অক্সাইড জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অধিক হারে দায়ী। যা দ্বারা পৃথিবী অতি শীঘ্রই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১১ বছরের বালকের টনক নড়ে যায়। প্রতিবাদে পাড়ি দিচ্ছে পথ।
পৃথিবীকে রক্ষায় সহায়তা করতে এক দুঃসাহসিক অভিযানে নেমেছে ১১ বছরের ব্রিটিশ বালক জুড ওয়াকার। কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্বন ট্যাক্স চালুর দাবিতে সমর্থন যোগাড় করতে হাঁটা শুরু করেছেন তিনি। উত্তর ইংল্যান্ড থেকে লন্ডন পর্যন্ত যেতে চান তিনি।
প্রতিদিন দশ মাইল করে হাঁটছেন জুড ওয়াকার। সুইডিশ জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গের অনুপ্রেরণায় সে ইয়র্কশায়ারের হেবডেন ব্রিজ থেকে হাঁটা শুরু করেছেন। ২১০ মাইল পাড়ি দিয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টারের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পর্যন্ত পৌঁছানো লক্ষ্য তার।
জাতিসংঘের জলবায়ু প্যানেল এই মাসে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেপথ্য বিজ্ঞান মেনে নিলেও কিভাবে এই সমস্যা নিরসন করা যায়, কাকে দায়ী করা যায়, বা এর মূল্য পরিশোধ কিভাবে করা হবে তা নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা এবং বিনিয়োগকারীর মধ্যে গভীর মতভেদ রয়েছে।
ব্রিটিশ বালক জুড ওয়াকারের বিশ্বাস মানবজাতিকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে কার্বন ট্যাক্স আরোপ করা। লন্ডন থেকে প্রায় ৫০ মাইল উত্তরে উবার্ন স্যান্ডস শহরের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এখন আমরা অনেক কিছুই জানি আর আমার মনে হয় কার্বন ট্যাক্স নিশ্চিতভাবেই এর একটি কার্যকর সমাধান হবে।’
জুড ওয়াকার কার্বন ট্যাক্স আরোপের পক্ষে সমর্থন যোগাড়ে একটি আবেদনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। বর্তমানে প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ এতে স্বাক্ষর করেছে। এটি যদি এক লাখ মানুষ স্বাক্ষর করে তাহলে পার্লামেন্টে এটি নিয়ে বিতর্ক হবে।
ওই আবেদনের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তারা ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূণ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আর কার্বন নিঃসরণের জন্য দূষণকারীদের দায়ী করতে লন্ডন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জুড ওয়াকার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে বিপর্যয়কর প্রভাব এড়াতে চাইলে আমাদের সত্যিকার অর্থেই এখনই পরিবর্তন আনা দরকার।’ জুড ওয়াকার প্রতিদিন ১০ মাইল করে হাঁটছেন। প্রতিদিনই তাকে সঙ্গ দিচ্ছে তার পরিবারের সদস্য বা বন্ধুরা। তার পরিবার তার পাশে থেকে তাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই সে এই পথ পাড়ি দিয়ে সফল হবে।
তবে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন কেন এত বেশি আলোচিত? কেনই বা এত চিন্তিত বিশ্ব? কারণ বিশ্বব্যাপী মনুষ্য কর্মকাণ্ড যেমন নগরায়ণের হার, কলকারখানার পরিমাণ, বনভূমির উজাড় অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সম্প্রতি এতটাই বেড়েছে, যার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হচ্ছে।
তাই মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে জলবায়ুর এই পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের সুন্দর এই ধরিত্রী নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। তাই জুড ওয়াকারের মতো আমাদেরও উচিত পরিবেশ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়া।