Skip to content

২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। এর কারণে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের হঠাৎ করে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়াটা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোন প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোন কারণ থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে কিডনির অসুখ , অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অসুখ, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ ইত্যাদির কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সাধারণত যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, স্থূলকায় কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা যায়। কিন্তু তারপরও হঠাৎ করেই অনেক সুস্থ ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় পড়তে পারে।

 

কোন সুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে উক্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষনিকভাবে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে মাথায় পানি দিয়ে বা বরফ দিলে আরাম পাওয়া যায়। প্রেশার কমানোর জন্য অনেকে তেঁতুলের শরবত খেয়ে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ এইসব পন্থা কাজে দেয়না। তাই এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং তার দেয়া ওষুধ খেতে হবে। আর যাদের পূর্ব থেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদেরও যদি হঠাৎ করে রক্ত চাপ বেড়ে যায় তাহলে অস্থির না হয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। মাথায় পানি বা বরফ ব্যবহারে সাময়িক উপশম পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রক্তচাপ কমানোর জন্য নিজে থেকে কোন ওষুধ গ্রহণ না করাই উচিত।

 

উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে করনীয়

বংশগত উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের তেমন ব্যবস্থা আবিষ্কৃত না হলেও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাই যেসব বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেগুলোর ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। নিম্নে এইরকম কতিপয় নিয়মাবলী আলোচনা করা হল।

 

১। অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এজন্য খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

 

২। কম কোলেস্টেরল ও চর্বি যুক্ত খাবার যেমন, খাসি বা গরুর গোস্ত, কলিজা কম খেতে হবে পারলে বাদ দিয়ে দিতে হবে। সুষম খাবার নিশ্চিত করতে কম তেল দিয়ে রান্না করা খাবার, ননী মুক্ত দুধ, উদ্ভিজ্জ তেল যেমন সয়াবিন, ভুট্টার অথবা সূর্যমুখীর তেল খাওয়া যেতে পারে। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তচাপ ঠিক রাখতেও রসুনের ভূমিকা রয়েছে। তাই নিয়মিত রসুন খাওয়া যেতে পারে। অধিক আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উত্তম। আটার রুটি ও ভাত পরিমাণ মতো খেতে হবে।

 

৩। অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। বাড়তি লবণ শরীরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধমনীর সংকোচনও বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ না খাওয়াই ভালো।

 

৪। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন হয় যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় সহায়ক। ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে, শরীর ও মনকে সতেজ রাখে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটাচলা করা, সম্ভব হলে একটু দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে। অফিস কিংবা বাসায় লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫। ধূমপানের কারণে হৃদরোগ দেখা দেয়। তাই তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

 

৬। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

৭। যেকোন শারীরিক ও মানসিক চাপ পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য নিয়মিত বিশ্রাম, হাসিখুশি থাকা, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। হবে। মানসিক শান্তি পাওয়া এবং মন প্রফুল্ল রাখতে নিজের শখের কাজ করা, নিজ নিজ ধর্মের চর্চা করা যেতে পারে।

 

৮। কোন সমস্যা না থাকলেও নিয়ম করে মাঝে মধ্যে অবশ্যই রক্তচাপ মাপতে হবে। এর ফলে আপনি উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত কিনা তা প্রথম থেকেই বোঝা যাবে। নিয়মিত মাথা ব্যাথা, চোখ ব্যাথা, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যায় অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক সময় নিম্ন রক্তচাপের কারণেও শরীরে দুর্বল ভাব হতে পারে। এমন হলে যথা শীঘ্রই ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করা উচিত। তাই উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ ধরা পড়া মাত্রই তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া হতেও রক্ষা পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ পুরোপুরি নিরাময় হয় না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ওষুধপত্র সেবন করতে হবে। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরও ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন।

কেউ কেউ এমনও ভাবেন যে উচ্চ রক্তচাপ তার দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোন সমস্যা করছে না বা রোগের কোন লক্ষণ নেই, তাই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে চান না। এ ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীরাই হঠাৎ হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ