Skip to content

একটা ঘর একটা আয়না! 

একটা ঘর একটা আয়না! 

আমি যখন জন্ম নিয়েছিলাম, আমার মা তখন খুবই খুশি হয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর সমস্ত না পাওয়া, মেয়ে হিসেবে তিনি যে-সব অবহেলা আর বঞ্চনা সয়েছেন, সে-সব তিনি অনন্ত আমাকে সহ্য করতে দেবেন না।  আমি যেন সে -সব পাই, যা তিনি পাননি। আমি যেন তা করতে পারি, যা তিনি একটা ছোট্ট সুযোগের অভাবে করতে পারেননি। 

তাই তিনি আমাকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য নিজের আয়েশের জীবনযাপন বাদ দিয়ে আমার সাথে থেকেছেন। আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, আমি সফল হব। আমি কারো অধীনস্ত হব না, যেমন তাঁকে হতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। নিজের পছন্দের খাবারের কথা উনি ভুলেই গিয়েছেন, বলা যায়। আমি কী পছন্দ করি, কী খেলে আমি সুস্থ থাকব সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। 

বয়স হচ্ছে বলে এখন বুঝি। এমনও না যে আমি পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হলে উনি সেখান থেকে কোনো কিছু পাবেন। আমি সফল হলে, সেটা আমারই জন্য ভালো, সেটা এখন বুঝতে পারি। কিন্তু মাঝেমধ্যে অবাক হই, একটা মা কী করে পারেন নিজের সমস্ত স্বত্বাটাকে পিছিয়ে দিয়ে নিজের সন্তানকে সমস্ত সুখ টুকু দিতে চান! কেন মায়েরা এমন হন? 

মাঝেমধ্যে খুব রাগ হয় মায়ের ওপর। আমার মা কেন নিজের  ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেননি? কেন তিনি সারা জীবন একটা ঘর এক আয়নায় বসবাস করেই বুড়ি হয়ে গেলেন? কেন তিনি বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে যান না? কখনো কি মায়ের ইচ্ছা করে না, একটু দামি রেস্টুরেন্টে সেজেগুজে বন্ধুদের  সাথে একটু আড্ডা দিতে?

সারা দিন শুধু ঘরের কাজ আর রান্নাবান্না, মাঝেমধ্যে শুধু একটু বাজারে যাওয়া, একটু টিভি দেখা। এটাই তাঁর জীবন! 

সে-দিন দেখলাম, মা বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করে চোখে হাল্কা কাজল দিলেন। আমার মনে পড়ে গেল ছোট্টবেলার কথা, সে-সময় মাকে ঠিক এমন ভাবেই দেখতাম। ঠিক এই আয়নার সামনে বসেই তিনি সুন্দর করে সাজতেন। তখন মা দেখতে এই পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরী ছিলেন। আমি মুগ্ধ চোখে দেখতাম, মাকে। কিন্তু এখন? নানা অসুখ-বিসুখ ভর করেছে ওপর। ত্বকে অসংখ্য বলিরেখা। আগের মতো চুলের মোটা গোছা এখন আর নেই। চোখের নিচে সারা জীবনের ক্লান্তি। কাপড়ও পরেন কোনো রকম একটা। নিজের দিকে একদমই যত্ন নেওয়ার ফুসরত এখন আর তাঁর নেই। 

প্রায়ই ভাবি, আমার মা তাঁর জীবনের সবটুকু দিয়ে দিয়েছেন আমাদের। আর নিজের জন্য একটা ঘর আর একটা আয়না নিয়েই বেঁচে আছেন আমার মা!