হারানো সোপান

হারানো সোপান
শ্রীপর্ণা দে
কতদিন হল প্রিয় গ্রাম ছুঁইনি তোমাকে রিক্ত দুহাতে
কোমল রোদ্দুর ঢালেনি আলো সকালের নরম বিছানায়,
ছুঁয়ে দেখিনি গোলাভরা সোনালী ধান
ছুঁয়ে দেখিনি আকাশভাঙা শ্রাবণের বৃষ্টি।
মাখিনি গোধূলিবেলার ইন্দ্রধনু
বহুদিন হল নিইনি ভিজে মাটির নির্যাস
সবুজ ঘাসের গালিচায় আদুরে শিশির বিন্দু ;
ফেলে এসেছি এভাবেই তোমায়
ব্যস্ততার পরিকল্পিত সিদ্ধান্তে।
শহরের সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের পাশে এক অপাংক্তেয় কামরা
নতুন জীবনের প্রথম পরিচ্ছেদ ,
সুখ- দুঃখ ,আদর- অনাদরে তৈরি পনেরো বছর
ফুরিয়ে এলে অবসরহীন জীবন
ক্লান্ত পাখি ডানায় মাখে আসমানী রঙ।
ছুটে যায় বিস্তৃত পথ জানালার বাইরে
দূর নক্ষত্রে মতো আমার এ অভিবাসন ,
বিবর্ণ দিনে অব্যক্ত কথার অপেক্ষায়
স্মৃতিবিজড়িত প্রাণহীন সেলফোন।
মিউজিয়মের ছায়া
শ্রীপর্ণা দে
ধুলো পড়া ডাকবাক্সেরও ভালোলাগে পুরনো চিঠির গন্ধ
যত গভীর রাতের ভিতর দিয়ে ছুটেছে দিন
ফিকে হয়ে এসেছে পুরনো গন্ধগুলো।
তোমার শরীরে সেই শ্রাবণের মেঘের গন্ধ
চুলে পাখির পালকের গন্ধ ,
কান্নায় মজে যাওয়া দিঘীর গন্ধ ,
ঠোঁটে অরণ্যের বন্য স্বাদ।
আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে কি এখনও !
কাঁটাতারের সীমানা ছাড়িয়ে মুক্তির পথ
শিরায়- শিরায় মেখে নেওয়া জীবনের নির্যাস ,
আমার ভালোবাসায় ছিল সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ
ছিল খরস্রোতা নদীর চাঞ্চল্য ;
মিছিলের জনজোয়ারে একটা উজ্জ্বল মুখ
আঁকড়ে ধরে স্বজন হারানোর রাতে
শব্দহীন মনখারাপের প্রভাতে।
রক্তের মধ্যে ডুবে থাকা চব্বিশ ঘণ্টা
সে রক্তের গন্ধ আমার অচেনা নয় ,
মনে পড়ে নির্ভেজাল স্বাধীনতার সহজ পাঠ
ভালোবাসার উপত্যকায় ফেলে আসা বর্ণপরিচয়।