রক্ষক যখন ভক্ষক
আমাদের সমাজে নারীর নিরাপত্তা বহুকাল আগে থেকেই ভূলুণ্ঠিত। ঘরে- বাইরে সর্বত্রই নারীরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। দিন দিন তা যেন আরো নতুন মাত্রা পাচ্ছে। যেমনটা দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি এক নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন নির্যাতন করার ঘটনায়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে রিমান্ডে নারী আসামিকে নির্যাতনের ঘটনায়। নির্যাতনের শিকার ঐ নারীকে গত ২৮ জুন একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে বরিশালের উজিরপুর থানায় নেয়া হয়। হত্যা মামলায় পুলিশ ঐ নারীর পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
যথারীতি রিমান্ড শেষে গত ১লা জুলাই বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঐ নারীকে হাজির করা হয়। ঐ নারীর আইনজীবী মজিবর রহমান বলেন, এই সময় সে নারী আদালতের সামনে খুড়িয়ে হাঁটছিলেন। যা থেকে শুরু হয় সন্দেহ। এবং সন্দেহের বশে ম্যাজিস্ট্রেট তার কাছে জানতে চান তার উপর কোন নির্যাতন করা হয়েছে কিনা। উত্তরে তিনি জানান তার যৌনাঙ্গে আঘাত করা হয়েছে।
ঐ নারীর আইনজীবী গণমাধ্যমকে আরো জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে তাকে শারীরিক ও গোপনাঙ্গে নির্যাতন করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটকে তিনি যৌনাঙ্গে আঘাত করার কথাটি বললে ম্যাজিস্ট্রেট একজন নারী কনস্টেবলকে দিয়ে পরীক্ষা করলে তার শরীরের গোপন জায়গাসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন মিলে।
নারীদের জীবনচক্রে প্রায় বহু ক্ষেত্রেই যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়৷ সে তালিকায় বহুক্ষেত্রে এমন অনেক ঘটনা থাকে যেখানে, 'রক্ষক যখন ভক্ষক' লাইনটি বেশ মানানসই হয়ে যায়। যেমন ধরুন একজন মানুষের সবথেকে নিরাপদ বাসস্থান তার ঘর। সেই ঘরেই যদি একজন নারী অনিরাপদ হয়, প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হয় তবে?
এরপর ধরুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের হাতে ছাত্রীরা অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে যেসব শিশুরা ঠিকভাবে বুঝতেও পারেনা যৌন হয়রানি মানে কি? তারাও শিকার হচ্ছে যৌন হয়রানির। আবারও রক্ষকই ভক্ষকের আসনে। এমন সব ঘটনা খবরের কাগজের প্রধান শিরোনাম হয়েছে বহুবার।
এসব নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণসহ সমাজের যেকোনো ধরনের অপরাধ হলে মানুষ সহায়তার জন্য আইনের দ্বারস্থ হয়। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই থাকে একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই যদি আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তখন? দিনশেষে প্রশ্ন ওঠে রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তবে কোথায় মিলবে সহায়তা?