বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে
সম্প্রতি নারীরা প্রতিটি স্তরে বেশ সাড়া জাগালেও বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় নারীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাপী যখন নারীরা বিজ্ঞানের চর্চায় নিজেদের বিশেষভাবে নিয়োজিত করেছেন সেখানে দেশে নারীদের মধ্যে নেই কোনোই তৎপরতা! যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৮ম নারী ও মেয়ে দিবস উপলক্ষে বিজ্ঞান সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে নারীদের অংশগ্রহণ কতটা সে সম্পর্কে নানা ধরনের মন্তব্য উঠে এসেছে।
এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে এক ভিডিও বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের নিয়ে এই শঙ্কার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক যে নারীরা বিশ্বব্যাপী মাত্র ১২ শতাংশ বিজ্ঞানী এবং ৩০ শতাংশ গবেষকদের প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের অবশ্যই মানসিকতা এবং শিক্ষার পরিবেশের প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করার লক্ষে কাজ করতে হবে। যাতে আরও বেশি সংখ্যক নারী ও মেয়েরা বিজ্ঞানে উৎকর্ষ লাভ করতে পারে।’ এ লক্ষ্যে তিনি সবার মানসিকতা পরিবর্তনে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ও প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এজন্য দরকার হলে নারীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে হবে। যাতে একে অপরের সহোযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন।
নারীরা যদি বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে না পারে তবে বৈশ্বিক উন্নতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেতে হবে। বর্তমান সময়কে শাসন করছে তথ্য- প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান। ফলে যদি নারীরা এই বৃহৎ পরিসর থেকে পিছিয়ে পড়ে তবে বিশ্বব্যাপী জাতিও সরব ভূমিকা পালনে অনেক পিছিয়ে পড়বে।
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও বিজ্ঞানের চর্চার নেই তেমন কোনোই অগ্রগতি। এ প্রসঙ্গে ১০০ বছরেরও অধিককালপূর্বে রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন স্ত্রী জাতির বিদ্যার দৌঁড় নির্ণয় করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য প্রস্থ (সেলাই করিবার জন্য) মাপেন।’ তাঁর এই মন্তব্যের খুব একটা পরিবর্তন চোখে পড়ে না। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা নিজেদের জায়গা করে নিলেও বিজ্ঞান ও গবেষণায় নারীদের পদচারণা সেই তুলনায় সীমিত।
সারাবিশ্বেই পুরুষের তুলনায় নারীরা বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় পিছিয়ে। বাংলাদেশে তা আরও কম৷ বলতে গেলে, আমাদের দেশের নারীরা বিজ্ঞান এবং গবেষণায় একেবারেই যুক্ত হন না। এর কারণ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশে যে নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন তাদের অধিকাংশই শিক্ষকতা, ডাক্তারি, ব্যাংকিং অথবা বিসিএসকে প্রাধান্য দেন। এছাড়া স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে অধিকাংশ নারী সাংসারিক কাজে অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফলে বিজ্ঞান ও গবেষণায় তাদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে!
শুধু আমাদের দেশেই যে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নারীদের এমনটা নয় বরং সারাবিশ্বেই নারীরা এই সেক্টর থেকে অনেক পিছিয়ে। বাইরের দেশে যে নারীরা বিজ্ঞান এবং গবেষণায় আসেন অনেক সময় দেখা যায় পরবর্তীকালে তারাও পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
এ লক্ষে নারী-পুরুষ উভয়ের পারস্পরিক সহোযোগিতায় পারে এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ ঘটাতে। পুরুষেরা যদি সন্তান লালন-পালন এবং সাংসারিক দায়-দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেন তবে নারীর একা সবটা সামাল দিতে হয় না। সেক্ষেত্রে নারীরাও এই পেশায় অধিক সম্পৃক্ত হতে পারবেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাও দিতে হবে। যতই নারী-পুরুষের সমানভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হোক না কেন, পরিবারের বাড়তি চাপ নারীর ঘাড়ে থাকেই। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কূপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার, মোল্লাতন্ত্রের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধ নারীদের ওপর বিশেষভাবে আরোপিত। সেখানে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী জাগরণ ঘটাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ অবিশ্বম্ভাবী। আর পরিবারের সবাইকে নারীদের বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিবারগুলো যদি তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে না পারে, তবে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা কাজে নিযুক্ত করতে নারীদের বেগ পেতে হবে।