Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর অনুপ্রেরণার অন্য নাম ‘নারী বিজ্ঞানী’

সারা বিশ্বে নারীরা অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় নারীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘বিজ্ঞান ও গবেষণা চর্চায় নারীর অংশগ্রণ’ শীর্ষক যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৮ম নারী বিজ্ঞান সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও গবেষণায় নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে নানা মন্তব্য উঠে আসে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, নারীরা বিশ্বব্যাপী ১২ শতাংশ বিজ্ঞানী এবং ৩০ শতাংশ গবেষকদের প্রতিনিধিত্ব করেন।’

আমাদের দেশে এমনকি সারাবিশ্বে নারীরা সবক্ষেত্রেই এগিয়ে গেলেও বিজ্ঞান এবং গবেষণায় পিছিয়ে রয়েছে। যারা গবেষণা বা বিজ্ঞান কর্মে নিযুক্ত হন দেখা যায় তারাও সংসারিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে এই পেশা থেকে পরবর্তীকালে ছিটকে পড়েন। তাই নারীদের অগ্রযাত্রাকে সুপ্রসারিত করতে পুরুষ-নারীর পারস্পরিক সহোযোগিতা খুবই প্রয়োজন। স্বামী-স্ত্রী যদি একে অন্যের কাজগুলো ভাগাভাগি করে করতে সক্ষম হন, তবে অনেকক্ষেত্রেই নারীদের চাপটা কমে আসবে। নারীরা দেশের বৃহৎ পরিসরের কাজগুলোতে অনায়াসে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে। তবে এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যারা নারীদের অনুপ্রেরণার বাণী শোনাতে আসেন তাদের মধ্যে নাজিয়া অন্যতম। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন নারী জীবনের সব প্রতিকূল পরিস্থিতিকে পায়ে ঠেলে আজ বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। সত্যিকার অর্থে প্রতিকূল পরিবেশকে যদি বশে আনা যায় তবে পৃথিবী জয় করাও সম্ভব তা বিজ্ঞানী নাজিয়া করে দেখালেন।

নড়াইলের কৃতি সন্তান নাজিয়া হোসেন বিশ্বের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের তালিকায় দ্বিতীয়বারের মতো স্থান পেয়েছেন। নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রামের সাংবাদিক এম মুরাদ হোসেনের একমাত্র কন্যা তিনি। নাজিয়া হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জন পি এ ইয়োনিডিসের সহযোগিতায় ১০ অক্টোবর বিশ্ববিখ্যাত পাবলিশার্স এলসোভিয়ার বিভিন্ন বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞান গবেষকের তালিকা প্রকাশ করে।

বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এসচ ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচক বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। স্কোপস ইনডেক্সেড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৬টি উপক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ করে দুইটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের ২০২০ ও ২০২১ সালের এই তালিকা স্থান পেয়েছে।

তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সরকারের স্কলারশিপে রয়েল মেলবোর্ন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি আর এম আই টি ইউনিভার্সিটিতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডিতে গবেষণারত আছেন। তার ৯০টি গবেষণা প্রবন্ধ স্বনামধন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানী নাজিয়ার এই কৃতিত্ব বাঙালি নারীর আলোকবর্তিকা। আবহমানকাল ধরে বাঙালি নারী সন্তান লালন-পালন এবং সাংসারিক কাজে সময় দিয়েই জীবন অতিবাহিত করেছে। কিন্তু সম্প্রতি নাজিয়ার মতো অদম্য নারীরা মুক্তির বাণী শোনাচ্ছে। জীবনের সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

নাজিয়াদের হাত ধরে এ সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসুক নারীরা। জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে আপন জগৎ সৃষ্টিতে নারীর উদ্যোমী শক্তি বিশ্বকে এগিয়ে নিক আরও একধাপ। জয় হোক নারীর। জয় হোক বিশ্ব মানবতার। যেখানে নারী- পুরুষ উভয়ে মিলে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে সুন্দর-সুষ্ঠু -কল্যাণময় পৃথিবী।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ