নারীপাচারে নারীর সম্পৃক্ততা এবং একগাদা প্রশ্ন!
বেশ কয়েকদিন আগে দেশের জনপ্রিয় এক পত্রিকায় 'নারীই কি নারীর শত্রু? ' শিরোনামে একটি লেখা চোখে পড়েছিলো। সে যাত্রায় কোনোরকম লেখাটিতে চোখ বুলিয়েছিলাম মাত্র। অনেকদিন পর আবারও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেই শিরোনাম। বর্তমানে টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা জুড়ে একটি আলোচিত খবর নারী পাচার এবং নারীপাচার চক্রের সমন্বয়ক এক নারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায় যখনই এ ধরনের খবর সামনে আসে, কমেন্টবক্সে দেখা যায় নারীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর মন্তব্য। কারণ, নারী পাচারের সাথে একজন নারীর সম্পৃক্ততা। যার জন্য পুরো নারী জাতিকে তুলোধোনা করতে ছাড়ছেন না অনেকেই।
চলুন তবে দেখে নেই কে এই নারী। আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের অন্যতম একজন হোতা নদী আক্তার ইতি। তবে এই নামের বাইরেও তার রয়েছে একাধিক নাম। কখনো জয়া আক্তার কখনো নূরজাহান, আবার কখনো লায়লা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন এই নারী। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।
২০০৫ সালে শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজীব হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে তার স্বামী রাজীব বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এরপর তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া এবং ভারতে নিয়মিত নারী পাচারের সাথে যুক্ত। সম্প্রতি নদী ছাড়া মানবপাচার চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও বিভাগের হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
নদী ছাড়া বাকি সদস্যরা হল – মো. আল-আমিন হোসেন (২৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), আমিরুল ইসলাম (৩০), পলক মণ্ডল (২৬), মো. তরিকুল ইসলাম (২৬) ও বিনাশ শিকদার (৩৩)। এখানে দেখা যায় গ্রেফতারকৃত এবং নারীপাচারে সম্পৃক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই পুরুষ। তবে সে বিষয়ে খুব একটা চোখ নেই কারো। মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে একজন নারীর সম্পৃক্ততা।
অপরাধ তো অপরাধই। হোক সেক্ষেত্রে অপরাধী নারী কিংবা পুরুষ। একজন নারীর অপরাধকে ঘটা করে দেখিয়ে পুরো নারী জাতিকে দোষারোপ করে পুরুষকে অপরাধ করার এক অদৃশ্য দলিল দেয়া হচ্ছে নাতো? এক্ষেত্রে পুরুষও জানতে পারছে নারী পাচারে নারী জড়িত থাকলেই তা আলোচনায় আসবে। তাই তারা নির্দ্বিধায় তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
শুধু এই ক্ষেত্রেই নয় আমাদের সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই চিত্র নিয়মিত। অপরাধকে নয় বরং অপরাধীকে নিয়ে তোলপাড় করা হয় সারা বিশ্ব। এরপর শুরু হয় অপরাধী কোন লিঙ্গের, কোন ধর্মের, কোন জাতের এমন একাধিক প্রশ্ন। যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পুরো জাতিকে দোষারোপ করতে পিছপা হয়না সাধারণ মানুষ। আর এর বড় একটি উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ের এই নারীপাচার চক্রের বিষয়টি।
তবে এসব চিত্র দেখে দিনশেষে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, লিঙ্গভেদে, জাতিভেদে অপরাধ বিবেচনা করে আদৌ কি কোন সমাজের অপরাধ ঠেকানো সম্ভব?