নারীর জন্য দ্রুত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করুন
নারীরা ঘরে-বাইরে সর্বক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকার। এর ফলে নারীর স্বাভাবিক কর্ম সম্পাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নারীরা নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধার সঠিক বস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যার ফলে চাইলেও কাজের ক্ষেত্রে পূর্ণ মনোযোগ দিতে সক্ষম হন না সবসময় । এক্ষেত্রে তারা কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ না পেয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে লড়াই করে এগিয়ে গেলেও যেখান থেকে তাদের রুটি-রুজি আসে বেশিরভাগক্ষেত্রেই সে স্থানে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর কারণ প্রতিবাদের ফলে একদিকে সমাজের চোখে নারীকেই খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়। আবার একমাত্র আয়ের পথটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে নারীরা সব নিপীড়ন মুখ বুজে সহ্য করে নেন অনায়াসে।
আধুনিক যুগে উপস্থিত হয়েও জাতি হিসেবে আজও মানসিকভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি আমরা। বরং পশুর মতো হিংস্র বর্বরতা বর্তমান আধুনিক মানুষের মধ্যে তার সবটাই লক্ষণীয়৷ অন্যের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করে তাকে কিভাবে বিপথে পরিচালিত করা যাবে তা এই সমাজের আয়ত্তে। ফলে নারীরা যুগের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের উন্নয়ন না ঘটালে যেমন চলছে না তেমনই এ সমাজের কটাক্ষ, রক্তচক্ষুকেও তারা উপেক্ষা করতে পারছে না। বর্তমান নারীরা মনের দিক থেকে ব্যাপক চাপে পড়েছে কর্মক্ষেত্রের সহায়ক পরিবেশ গড়ে না ওঠার কারণে।
প্রত্যেকটি নারীকেই পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হয়। বাবা-ভাইয়ের মতো অভিভাবক শ্রেণি কোনটা করা উচিত আর কোনটা নয়, এ ব্যাপারে চাপিয়ে দেন । ফলে কর্মক্ষেত্রে যদি নারী সমস্যার সম্মুখীন হয় তবে সে বিষয়ে অনেকক্ষেত্রে নারীরা পরিবারের পরামর্শ, আলাপ করতেও দ্বিধা করেন। কারণ যদি কাজের ক্ষেত্রটি ভালো না হয় তবে নারীকেই তারা দোষারোপ করেন। ফলে সবদিক থেকে নারীরা এতটাই চাপের মুখে পড়েন যে, তাকে মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিয়ে টিকে থাকতে হয়। তবে নারীরা যদি কাজের সঠিক পরিবেশ পান তবে অবশ্যই তারা দেশের উন্নয়নে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। এর জন্য পুরুষতন্ত্রের নিপীড়নকারী মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
যদি সে পথে সর্বত্র বাধার মুখে পড়তে হয় তবে সবার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা না থাকা প্রায় সমান হয়ে পড়ে
আমাদের সমাজে নারীকে সবসময় দুর্বল মনে করা হয়। এর ফলে শৈশব থেকেই কন্যা শিশু ঘরকুনো হয়ে বেড়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের জীবনের তাগিদে তাকে পরিবর্তন হতে হয়। পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। তাই নারীরা অনেকক্ষেত্রে তাদের কী করা উচিত সেটাও ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেন না। কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ না পেলে তাদের মধ্যে ভয়, জড়তা কাজ করে। নিজেদের কপালের দোষ দিয়েই ক্ষান্ত থাকে বেশিরভাগক্ষেত্রে। এর মধ্যে অপরাধীরা তাদের অপরাধ সংঘটিত করার সুযোগ পায় আরও বেশি। অন্যদিকে ভয়-ভীতি, সংকোচ নিয়ে নারীকে কাজে নিযুক্ত থাকতে হয়। যার ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীকে পিছিয়ে পড়তেও দেখা যায়।
তবে নারীদের জন্য নতুন করে ভাবা উচিত। কর্মক্ষেত্রে কোনরকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা যেন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে বলে রাখা প্রয়োজন, সাধারণ কর্মকর্তা বা কর্মচারী শ্রেণির চেয়ে যারা প্রধান থাকেন তাদের দিক থেকেই সমস্যা সৃষ্টি হয় বেশি। এর ফলে নারীর অভিযোগ করার সুযোগটাও থাকে না। কারণ যে বা যার কাছে অভিযোগ দাখিল করবে তারাই যদি অপরাধী হয় তবে নারীদের করণীয় কী!
এলক্ষে প্রত্যেকটি সেক্টরে নারীদের সুরক্ষায় বিশেষ টিম গঠন করতে হবে। নারীরা যাতে যেকোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে তার প্রতিকার নিশ্চিত করতে পারে। আইনের কঠোর প্রয়োগ, সহকর্মীদের সাপোর্ট, অভিযোগ বক্স গঠনের মাধ্যমে নারীদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
নারীর সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ নারীরা সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঘরের বাইরে বের হয় তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে নিজের এবং দেশের উন্নয়ন করতে। কিন্তু যদি সে পথে সর্বত্র বাধার মুখে পড়তে হয় তবে সবার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা না থাকা প্রায় সমান হয়ে পড়ে । তাই কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সহায়ক পরিবেশ।