বিজয়ের পথে নারীর বীরত্ব
কালের বিবর্তনে ধ্রুব তারার মতো সত্য সংসারজীবনে নারী যতটা যত্নে সুঁইসুতোর বুননে তার কৃতিত্বে ফুটিয়ে তুলতে পারে শান্ত নদীর বয়ে চলা সুর আবার সেই সুঁই দিয়েই নিখুঁত ভাবে খুটে বের করে আনতে পারে চলার পথের অজাচিত কাঁটা।
কেউ স্বীকার করুক কিংবা নাই করুক ইতিহাস ঘেটে একথা বলতে আজ আর দ্বিধা হয়না আমাদের প্রগতিশীল-সভ্য সমাজে নারীরা পরমুখাপেক্ষী না হয়ে দেশ ও জাতির সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে সগৌরবে।
বিশেষ করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দিয়ে শুরু করে বাংলার মাটিতে একের পর এক ঘটে যাওয়া আন্দোলনে নারীদের ছিল অকুতোভয় অংশগ্রহন।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে নারীরা জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত হওয়া শুরু করে। সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারীর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯২০ সালে।
১৯৩০ সালে ‘ডান্ডি অভিযানে’ সরোজিনী নাইডু ও কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ নারীনেত্রী ছিলেন অরুণা আসিফ আলি, যাকে বঙ্কিমচন্দ্র ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসের উত্তরসূরি হিসেবে উপস্থাপন করেন বলে অনেকের দাবি।
১৯৪৬ সালের ‘তেভাগা’ আন্দোলনের সময় কৃষক নারীদের নেতৃত্বদানকারী সাহসী নারীদের মধ্যে আসে মনি সিংহ, চারু মজুমদারসহ অন্যতম নারীনেত্রী ইলা মিত্রের নাম।
৪৭ পরবর্তী অর্থাৎ দেশ ভাগের পরে বায়ান্নর ভাষার আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও এরপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের লড়াই শেষে বিজয় অর্জনের ইতিহাসে নারীর স্বকীয় অংশগ্রহণ ও ভুমিকা ছিল অকৃত্রিম।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারী শুধু শক্তি ও প্রেরণাদাত্রী হিসেবেই কাজ করেনি, পুরুষের পাশাপাশি নারীর তরবারিও ঝলসে উঠেছিল।
আমাদের গৌরব ময় এ মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের আপামর জনগণের যুদ্ধ।
এই যুদ্ধ শুধু পুরুষরাই করেনি, করেছে নারীরাও। কেউ অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছে, কেউ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রƒষা করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, ভরসা দিয়েছে, মনোবল জুগিয়েছে, কেউ বর্হিবিশ্বে স্বাধীনতার সপক্ষে বিশ্বমত গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
তবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদানকে কেবল বীরাঙ্গনা হিসাবে ও শহীদের মা-বোন-স্ত্রী হিসবে দেখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে নারীঅবদানের কথা বলতে গেলে দেখা যায় কেবল কতজন নারী বীরাঙ্গনা হয়েছেন,
হাজারো নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রুষা বা ভাত রেঁধে খাইয়েছেন– এসব দিক নিয়েই আলোচনা করা হয়। অথচ কতজন নারীদের প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ , যুদ্ধের ময়দানে তাদের অস্ত্রের ঘায়েও যে শত্রু নিধন হয়েছে,তারাও শহীদ হয়েছেন এসম্পর্কে খুব কমই আলোচিত হয়। এমনকী গবেষকরাও এদিকে খুব একটা নজর দেননি।
তবে অনেকপরে হলেও বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণার মাধমে ‘নারীমুক্তি যোদ্ধাদের’ সম্পর্কে জানতে পারছি।
মুক্তিযুদ্ধে নারী সংগঠক হিসাবে কাজ করে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তারা হচ্ছেন বেগম সুফিয়া কামাল, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, বেগম রাফিয়া আক্তার ডলি, অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম, বেগম হোসনে আরা মান্নান, মালেকা বেগম, আয়শা খানম, বেবী মওদুদ, মুশতারি শফি প্রমুখ নারী নেত্রীরা।
এছাড়া নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন তিনজন- ১৯৭২ সালে ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম; এরপর ১৯৭৩ সালে তারামন বিবি ও ১৯৯৭ সালে খেতাব পেয়েছেন কাঁকন বিবি। তারামন বিবি ও কাঁকন বিবি ২০১৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন এবং দীর্ঘদিন তারা দুজনই ছিলেন বিস্মৃতির আড়ালে।
মুলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়ে প্রায় দুই দশকজুড়ে এদেশে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও পরিচয় তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। যে কারণে একজন বিথীকা বিশ্বাস বা শিশির কণা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের গানবোট গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিলেও যুদ্ধ-পরবর্তীকালে তারা যথাযোগ্য বীরের মহিমায় অভিষিক্ত হননি। উপরন্তু তাদের ভাগ্যে জুটেছিল সামাজিক লাঞ্ছনা। যুদ্ধ শেষে এই বিথীকা বিশ্বাস ও শিশির কণাকে তাদের পরিবার ও সমাজ গ্রহণ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের রমা চৌধুরী। যুদ্ধের পর তারও স্বামীগৃহে ঠাঁই মেলেনি। যুদ্ধ-পরবর্তী সমগ্র বাংলাদেশে এমন উদাহরণ অসংখ্য।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মায়েদের, স্ত্রীদের আত্মত্যাগের কথাও বলা দরকার। শহীদ রুমীর মা জাহানারা ইমাম, শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগমের মতো সব মা-ই মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। অসংখ্য নারী স্বামীকে হারাবার সমূহ সম্ভাবনার কথা জেনেও তাদেরকে যুদ্ধে যেতে বাধা দেননি। তাদের এই ত্যাগও ইতিহাসের উজ্জ্বল অংশ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অংশ নিয়েছেন অনেক নারী শিল্পী। পথে-প্রান্তরে অলিগলিতে গান গেয়ে তারা অর্থ সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যয় করেছেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে গান শুনিয়ে তাদের উদ্দীপনা জুগিয়েছেন শিল্পীরা। আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে শরণার্থী শিবিরে ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসংখ্য নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সেবা দিয়েছেন।
মূলত এভাবেই নানামুখী ভূমিকা নিয়ে নারীরা বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে ছিলেন অদম্য। তারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে রান্নার কাজ করেছেন, অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রহরী হিসেবেও কাজ করেছেন। আবার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের অবস্থান সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের লুকিয়ে রাখা, অস্ত্র এগিয়ে দেওয়া অথবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা ও চিকিৎসা করা, তাদের জন্য ওষুধ, খাবার এবং কাপড় সংগ্রহ করা- রক্ত ঝরা একাত্তরে নারীদের এই সক্রিয় কর্মকাণ্ডই ছিল তাদের মুক্তিযুদ্ধ।
শুধু বাঙালি নারীই নয়, সর্বাত্মকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন আদিবাসী নারীরাও। যুদ্ধের সময় যদিও বাংলাদেশ সরকারের নীতিতে নারীদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া, গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা এবং প্রশাসনিক কাজের নেতৃত্বে নারী সাংসদদের দায়িত্ব দেওয়া ইত্যাদির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তারপরও এ ক্ষেত্রে নারীরা ছিলেন অনড়। তারা সম্মুখসমরে অংশ নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, স্বাধীন বাংলাদেশেও রাজপথের যে-কোন লড়াইয়ে পুরুষের পাশে থেকে নারীরা তুলেছে তার জোড়ালো কন্ঠস্বর। আমরা যেমন ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর ২৪-এর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও ফ্যসিবাদ বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ নারীর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতারই ফসল।
১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী যেমন পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিতে ভয় পায়নি, অস্ত্র চালাতে পিছ পা হয়নি তেমনি ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও সর্বত্র ছিল নারীদের সরব উপস্থিতি। এবারের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীরা ছিলেন অদম্য ও অপ্রতিরোধ্য।
অহংকারের সঙ্গে বলতে হয়,ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল এবার চোখে পড়ার মতো। বিপ্লবে-স্লোগানে উচ্চকিত কণ্ঠস্বর যেমন ছিল, তেমনি রাস্তায়-দেয়ালে গ্রাফিতি, চিত্রাঙ্কনেও ছিল কাঁধে কাঁধ মেলানো উপস্থিতি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাম্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো এটিও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের নাম নিতে হলে নারী হিসেবে সবার আগেই আসবে উমামা ফাতেমার দুঃসাহসিকতা। জানা যায় বৈষম্য মুলক আন্দোলনের সময় ১৭ তারিখে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়, ছেলেরা দুপুর থেকেই হল ছেড়ে যাওয়া শুরু করে। কিন্তুু সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৫ হলের মেয়েরা দাঁত কামড়ে হলে পড়ে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম নারী শিক্ষার্থী এি উমামা। তিনি জানান,’ছেলেদের একটা গণগ্রেপ্তারের ভয় ছিল, তাদের ওপর নির্যাতন বেশি হচ্ছিলো। এখানে নারীদের একটা বিশাল অংশগ্রহণ ছিল। সব মেয়েরাই আস্তে আস্তে যে জেলা শহরে থাকে সেখানে প্রোগ্রাম গুলোতে আসা শুরু করে। আমি যেহেতু ঢাকায় ছিলাম, আমি ঢাকায় প্রোগ্রাম করি। আস্তে আস্তে মানুষ যখন তার ভয় ভেঙ্গে একটু একটু করে বের হতে থাকে তখন কিন্তু একটা গতি তৈরি হয়ে যায়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নারী সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনি জানান, ‘নারীদের অংশগ্রহণ অভূতপূর্ব ছিল। সবাই নিজের বোনের মতো সবাই সবার পাশে থেকেছে। আমি যতদূর দেখেছি, সবাই খুব আগ্রহীই ছিল সমতার সংগ্রামটা সফল করার জন্য।’
এডারা দেখা যায় এ আন্দোলনে সমন্বয়কদের ডাকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সাড়া দিয়েছেন দারুণভাবে। বুলেট-বোমার সামনে তারা ছিলেন নির্ভীক। এমনকী নারীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বীরবিক্রমে।
এদের মধ্যে সহ- সমন্বয়ক মাইশা মালিহার কথা না বললেই নয়।, আন্দোলনের মাঠে সরাসরি গুলি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড কিছুই যেন দমাতে পারেনি তাকে। তিনি জানান, ‘সেখান থেকে বাঁচার আর উপায় ছিল না। মেয়ে হিসেবে কোনো ছাড় পাওয়া যায়নি।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের হল সমন্বয়ক আদিবা সায়মা খান বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিলাম নিরস্ত্র। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। যখন ইট-পাটকেল দিয়ে মেয়েদের আঘাত করা হচ্ছে, মাথা ফাটিয়ে দেয়া হচ্ছে এটা দেখেছি নিজের সামনে। এখন পর্যন্ত সেই ট্রমা থেকে বের হতে পারিনি আমি।’
কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে স্বৈরাচার দমনের আন্দোলনে রূপ নেয়ার এই মিছিলে ঘরের বাঁধাও সহজেই ডিঙিয়েছেন অংশ নেয়া এ মেয়েরা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহ- সমন্বয়ক সানজানা আফিফা অদিতি বলেন, ‘আমাদের যেটা বলা হতো যে, লিখালিখি করা যাবে না। স্বাভাবিকভাবে তারা (বাবা-মা) একটু চিন্তিত ছিল আর বিশেষ করে আমি যেহেতু মেয়ে সেটা আরও বেশি চিন্তা ছিল তাদের। ছেলেদের ধরে নিয়ে দেখা যায় হয়তো তাদের মারবে, কিন্তু মেয়েদের ধরলে একটু সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের ঝুঁকি থাকে। তখন আমি জোর করে বলেছি যে, আমার নামে মামলা হবে, আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে, অনেক কিছু হতে পারে, এটা মেনে নিয়েই আমি এখানে এসেছি। এখন আমি এটা মেনে নিয়ে এসেছি, তোমরা মেনে নাও, এরপর যদি মোন হয় তোমরা আমাকে সাপোর্ট দিবা তাহলে দাও। আর যদি বলো যে দিবা না, তাহলে বলো আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাবো। আমি কোথায় থাকবো কেউ জানবে না।’
গণজমায়েতে নানান রকম হেনস্থার শিকার হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা এ দেশের নারীরা পেয়েছেন অসংখ্যবার। তবে, এবারের লাখো মানুষের আন্দোলনেও এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে পড়তে হয়নি কাউকে।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন নারী বলেন, ‘আন্দোলন আমরা যাদের সাথে করেছি, আলহামদুলিল্লাহ তাদের থেকে অনেক সুন্দর ব্যবহার আমরা পেয়েছি। তাদের থেকে কোনো হ্যাসেল পাইনি আমরা। কিন্তু আমরা অনেক সময় বাইরের লোকদের থেকে হ্যাসেলের শিকার হয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম পুলিশ, ছাত্রলীগ, ভাড়া করো টোকাইদের থেকে অনেক সাফার করেছি।’
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অন্য একজন নারী বলেন, ‘আমাদের ওপর যখন ছাত্রলীগে ও তাদের টোকাইরা সাথে পুলিশ হামলা চালায় তখন আমাদের ভাইরা আমাদের তাদের মাঝে নিয়েছে সেফ করার জন্য। তারা আমাদের সইড করে দিচ্ছিলো যেন আমাদের কোনো ক্ষতি না হয়। তারা খুবই হেল্পফুল ছিল। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের, তারাই যদি আমাদের ওপর হামলা করে, তাহলে আমাদের তো মনে হয় না আমরা সেফ আছি।’
নারী-পুরুষ সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে রচিত হয় ইতিহাস। পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে বলেছিলেন, বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী-অর্ধেক তার নর। ঠিক একইভাবে স্বৈরাচারী শাসনের হাত থেকে মুক্তি এনে দিতে সমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের নরী-পুরুষ।