ইন্দোনেশিয়ায় রিভেঞ্জ পর্ণের শিকার নারীদের বেহাল দশা!
'রিভেঞ্জ পর্ণ' বা 'প্রতিশোধমূলক পর্ণ' যার মানে, যৌনমিলনের ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়াই অনলাইনে প্রকাশ করা। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং সাধারণত অপরাধীকে( যিনি অনুমতি ব্যতীত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেন) শাস্তির আওতায় আনা হয়৷ কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার আইনে এ বিষয়ে রয়েছে বিস্তর ফারাক। যার কারণে রিভেঞ্জ পর্ণের শিকার নারীদের কোন প্রকারের সহায়তা তো মিলছেই না বরং বেশিরভাগ সময় হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।
ইন্দোনেশিয়ায় রিভেঞ্জ পর্ণের শিকার হয়েও বেশিরভাগ নারীই আইনের দ্বারস্থ হতে রাজি নন। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও চাননা তারা। ইন্দোনেশিয়ার নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক জাতীয় কমিশনের এক হিসেব অনুযায়ী, সে দেশে ২০২০ সালে অনলাইনে ১,৪২৫টি জেন্ডার সহিংসতার অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রকৃত সংখ্যাটি আরো অনেক বড়। আইনের প্রতি ভয়ের কারণে এ সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে খুব ধীর গতিতে।
স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে কি এমন আছে ইন্দোনেশিয়ার এ রিভেঞ্জ পর্ণ সংক্রান্ত আইনে যার কারণে নারীরা অপরাধের শিকার হয়েও কোন সহায়তা চান না। কারণ হল, ইন্দোনেশিয়ার আইন অনুসারে কে অন্যায় করেছে এবং কে এর শিকার তার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এসব ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফি আইনটি ভিকটিমের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে।
দেশটিতে ২০১৯ সালে এক নারীর যৌনমিলনের একটি ব্যক্তিগত ভিডিও অনুমতি ব্যতীত প্রকাশ করা হলে যে মামলা করা হয়, তাতে ভিকটিমকেই তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। যদিও পরে উচ্চতর আদালতে আপিল করার পর রায়টি বাতিল হয়ে যায়। মোদ্দাকথা, এ আইন অনুসারে, কোন ফাঁস হওয়া ভিডিওতে যাকে দেখা যাবে তাকেই শাস্তি দেয়া যাবে।
এ আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কোন কন্টেন্টে নিজে মডেল হতে পারবেন না, অথবা এই কাজে কোন অনুমতিও দিতে পারবেন না। এছাড়াও কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি তৈরি, প্রযোজনা, বিতরণ, নকল, সম্প্রচার, আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্য এবং ভাড়া দিতে পারবেন না। এ আইনের পাশাপাশি আইটিই নামে পরিচিত আরেকটি আইনে বলা হয়েছে, "শালীনতা ভঙ্গ হয় এমন কোন কন্টেন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক দলিল বিতরণ ও সম্প্রচার নিষিদ্ধ।"
অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া মুসলিমপ্রধান একটি দেশ। তাই যৌনতা এবং বিয়ের আগের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ধর্মীয় বিধিনিষেধ তো রয়েছেই। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক কলঙ্কের ভয়। তাই দেশটিতে নারীদের অনেকটা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েই চলতে হয়। আর এদিকে এ আইনকে ব্যবহার করে প্রতিশোধ পরায়ণ পুরুষেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে এবং বারবার পার পেয়েও যাচ্ছে। অন্যদিকে অপরাধের শিকার হয়েও ভয়ে দিন কাটাচ্ছে বহু নারীরা।