Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমা গেটউড: অ্যাপালেশিয়ান ট্রেইল জয়ী প্রথম নারী

পৃথিবীতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের খুব একটা অভাব নেই বললেই চলে। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষেরই ভ্রমণের প্রতি রয়েছে একটু অন্যরকম ঝোঁক। তাইতো ভ্রমণের জন্য বিশাল পরিমাণের অর্থ খরচ করতেও পিছপা হয় না অনেকেই। দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ায় নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চারের উদ্দেশ্যে।  কিন্তু টানা ১৪৬ দিন দীর্ঘ ২০৫০ মাইল পায়ে হেটে  অতিক্রম করার কথা কি ভাবতে পারেন?  ৩০-৩৫ বছরের যুবকদেরও শুনেই হয়তোবা ক্লান্তি ভাব চলে আসছে।  কিন্তু ৬৭ বছর বয়সে নির্বিঘ্নেই এই পথ পাড়ি দিয়েছেন একজন নারী। যে বয়সে মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে ঘরে নাতি নাতনিদের সাথে খেলা করার কথা, দিনভর শুয়ে বসে কাটানোর কথা।  ঠিক সেই বয়সেই তিনি করেছেন অসাধ্য সাধন।  

তার নাম এমা গেটউড, যিনি 'গ্র্যান্ডমা গেটউড' নামেও বেশি পরিচিত।  তিনি ১৮৮৭ সালের ২৫ অক্টোবর ওহাইও প্রদেশের গ্যালিয়া কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবা হিউ ক্যাল্ডওয়েল ছিলেন একজন কৃষক। গৃহযুদ্ধের কারণে তারা বাবা একটি পা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার পর থেকে তিনি মদ্যপান ও জুয়াখেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তারা ১৫ জন  ভাইবোন ছিলেন যাদের দেখাশোনা করতেন তার মা একাই। এভাবেই নিতান্ত এক দরিদ্র পরিবারে অনেকটা কষ্টেই বেড়ে ওঠেন তিনি। অতঃপর  ১৯ বছর বয়সে এমা ২৬ বছর বয়সী পেরি ক্লেটন গেটউড কে বিয়ে করেন।  কিন্তু বিবাহিত জীবনও খুব একটা সুখের হয়না।  প্রতিনিয়ত স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন।  তবে একবার প্রতিবাদও করতে যান তিনি। স্বামীর গায়ে ময়দার  বস্তা ছুড়ে পারেন।  পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে যা ছিল মহা অন্যায়।  তার ফলস্বরূপ গ্রেফতারও করা হয় তাকে।  এই অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাংসারিক জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন  'এমা'।  ১৯৪১ সালে এমা তার স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ করে। 

ততদিনে হয়তো তার জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তিনি তার জীবনের পরবর্তী সময়টাকে নষ্ট হতে দেন নি। বরং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন,  পর্যটক ও ভ্রমনপিপাসু মানুষের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। চলুন তবে জেনে আসা যাক কিভাবে পৌঁছালেন এ জায়গায় –

 

১৯৪৯ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় অ্যাপালেশিয়ান ট্রেইল সম্পর্কে পড়তে গিয়ে এমা জানতে পারেন, তখন পর্যন্ত কোন নারী এই ট্রেইলটির পুরো পথ হাইকিং করেনি। আর তখনি এই ট্রেইলটি জয়ের জন্য তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।  তবে চলুন আগে একটু জেনে নেই হাইকিং মানে কি।  সাধারণত আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু  দীর্ঘ পথ কোন ধরনের যানবাহন ছাড়া পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে গন্তব্য স্থলে পৌঁছনোকেই হাইকিং বলা হয়। আর তার সময়কাল কয়েকদিন থেকে কয়েকমাসও হতে পারে। হাইকিং এর জন্য জনপ্রিয় একটি ট্রেইল হল যুক্তরাষ্ট্রের  অ্যাপালেশিয়ান ট্রেইল। 

১৯৫৫ সালের মে মাসে তিনি যাত্রা শুরু করেন এবং সেপ্টেম্বর  পর্যন্ত মোট ১৪৬ দিন, প্রতিদিন গড়ে ১৪ মাইল হেঁটে, ১৪টি প্রদেশের মধ্য দিয়ে তৈরি পথ অতিক্রম করে তিনি এ ট্রেইলের যাত্রা সম্পূর্ণ করেন। এরপর তিনি ১৯৫৭ এবং ১৯৬৪ সালে  দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ট্রেইলটি জয় করেন।  

তবে এমা ১৯৫৫ সালে ৬৭ বছর বয়সে প্রথম এই ট্রেইল জয় করলেও, এটা তার প্রথম প্রচেষ্টা ছিল না। ১৯৫৪ সালে তিনি প্রথমবার যাত্রা শুরু করেছিলেন । কিন্তু সে যাত্রায় চশমা ভেঙে যাওয়ার কারণে মাঝপথেই থামতে হয় তাকে। এরপর রেঞ্জারদের একটি দল তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরতে সাহায্য করে। পরের বছর জর্জিয়া থেকে শুরু করে তিনি সফলভাবে এই যাত্রাটি সম্পন্ন করেন। তবে এই দু'বারের কোন বারই তিনি তার সন্তানদেরকে অভিযানের ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানাননি।
তিনি যে শুধু প্রথম নারী হিসেবে এই ট্রেইলটি জয় করে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি  তিনিই প্রথম হাইকার যিনি একাধিকবার (৩বার) এই ট্রেইল সম্পন্ন করেছেন।  অ্যাপালেশিয়ান ট্রেইল ছাড়াও এমা আরও কয়েকটি ট্রেইলে হাইকিং করেন।

১৯৭৩ সালে ৮৫ বছর বয়সে এমা গেটউড পরলোকে পাড়ি জমান। কিন্তু পর্যটক ও নারীদের কাছে বিশাল এক অনুপ্রেরণা হয়ে থেকে যাবেন সবসময়।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ