করোনা ভাইরাস সবার দেহে সমান গুরুতর হয় না কেন?
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন পৃথিবীর নানা দেশের অসংখ্য লোক, কিন্তু সবার দেহে এ ভাইরাস সমান গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না- নিশ্চয়ই অনেকেই খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা।
প্রথম প্রথম বলা হয়েছিল, যাদের আগে থেকে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে- তাদেরই করোনা ভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হবার ঝৃঁকি বেশি। কিন্তু পরে দেখা গেছে, এমন লোকও করোনা ভাইরাসে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছেন যাদের আগে থেকে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না।
আবার এমন লোকও আছেন যাদের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোন লক্ষণই দেখা যায় না। কত শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে এটা হয় তা এখনো জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেটাই বের করতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ডিএনএ-র এর ভান্ডার ব্যবহার করছেন তারা।
এর নাম ইউকে বায়োব্যাংক। যাতে ৫ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবকের রক্ত, থুথু এবং প্রস্রাবের নমুনা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক দশকব্যাপি সময়ের তথ্য সংরক্ষিত আছে। এতে এখন যোগ হচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত উপাত্ত। এসব তথ্য আগে ক্যান্সার, স্ট্রোক বা স্মৃতিভ্রংশ সম্পর্কে জানার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এবার তাতে যোগ হচ্ছে করোনা ভাইরাস পজিটিভ টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য, এবং হাসপাতাল ও স্থানীয় ডাক্তারের দেয়া উপাত্ত। এই তথ্যভাণ্ডারে ঢুকতে পারেন পৃথিবীর নানা দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী।
এ প্রকল্পের প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক রোরি কলিন্স বলেছেন, ‘আমরা হয়তো খুব দ্রুত কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করে ফেলতে পারি। এটা হতে পারে গবেষকদের জন্য এক স্বর্ণখনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিড ১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে পার্থক্যগুলো কী– তা জানার জন্য ইউকে বায়োব্যাংকের উপাত্ত পরীক্ষা করছি। তাদের জিনগত গঠনে কী পার্থক্য আছে? এ পার্থক্যের সাথে কি তাদের রোগ-প্রতিরোধী বা ইমিউনিটি ক্ষমতার সম্পর্ক আছে? তাদের পূর্ববর্তী স্বাস্থ্যগত অবস্থার মধ্যে কি কোন ভিন্নতা আছে?
গবেষকরা একেকজনের পুরো জিনোমটাই তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করবেন– দেখবেন ডিএনএর মধ্যে কোথায় কোথায় অতি ক্ষুদ্র সব পার্থক্য আছে।
বিশেষ করে তারা পরীক্ষা করে দেখবেন এসিই-টু নামে একটি জিনকে– যা একধরণের রিসেপটর তৈরিতে সহায়তা করে– যার মাধ্যমে করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে সেখানকার কোষগুলোকে সংক্রমিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জঁ-লরেন্ট কাসানোভার নেতৃত্বে আরেকটি দল্ও এমন এক গবেষণা করছে।
অধ্যাপক কাসানোভা বলছেন, অতীত গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু লোকের ক্ষেত্রে- যাদের ইমিউনিটির জন্মগত কোন ত্রটি আছে- তাদের ফ্ল বা হারপিসের মত কিছু রোগ হলে তা গুরুতর চেহারা নিতে পারে। এমন হতে পারে যে এই জন্মগত ত্রুটি দশকের পর দশক দেহে সুপ্ত থাকতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না তিনি ওই বিশেষ মাইক্রোবে সংক্রমিত হন, ততদিন এটা কেউ জানতেই পারে না। আমাদের কর্মসূচিতে এটাই দেখা হবে যে কোভিডের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটে কিনা।
আইসল্যান্ডের ডিকোড জেনেটিক্স-এর প্রধান নির্বাহী ড. কার্ল স্টেফানসন বলছেন, ‘এমন হতে পারে মানুষের দেহে ভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রেইনের ভাইরাস রয়েছে। কোনোটা হয়তো অন্যগুলোর চেয়ে বেশি মারাত্মক। আরেকটা কারণ হতে পারে যে রোগীর জেনেটিক বৈশিষ্ট্যর মধ্যেই আছে এর চাবিকাঠি। অথবা হয়তো দুটো কারণই এক সাথে কাজ করছে– এমনও হতে পারে।